[ঈদ স্পেশাল] গল্পের নামঃ অপরিচিত ভালোবাসা
লেখক: SMsudipBD About 2020s ago |
গল্পের নামঃ অপরিচিত ভালোবাসা (ঈদ
স্পেশাল)
//
ডিউটি শেষ করে বের হলাম! এখন আর কাজ
নাই, এই ৩ ঘণ্টা ডিউটির জন্য বাড়ী গিয়ে
ঈদ করতে পারলাম না,
আমি ফারহান, একজন পুলিশের সদস্য। ৬
মাস আগে চাকুরীতে জয়েন্ট করেছি।
জীবনের এই প্রথম বাবা-মা, আত্মীয়,
বন্ধুদের ছাড়া ঈদ।
[IMG]https://smsudipbd.wapkiz.mobi/download/dl4/d00900d037c99547f4d23377d486f6f8/smsudipbd+wapkiz+mobi/oporichito-valobasa-(smsudipbd.wapkiz.mobi).jpg[/IMG]
।।
দুপুরে এসপি স্যারের পক্ষ থেকে দাওয়াত,
উনি আমাদের মা-বাবা।
আম্মু ফোন করলো!
আমি- আম্মু, আসসালামু... কেমন আছো?
আম্মা- এই তো বাবা! তুই কি এখন ও ডিউটি
করছিস?
আমি- না শেষ। আজ আর ডিউটি নাই।
আম্মা- মন খারাপ করিস না বাবা।
আমি- তোমাদের খুব মনে পড়ছে মা। (এই
বলে কাঁদতে লাগলাম, সত্যি অনেক কষ্ট
হচ্ছিলো)
আম্মা- ছেলে হয়ে কাঁদছিস পাগল,
এই বলে বাবা কে দিয়ে দিলো, কারণ ওপাশ
থেকে আমি আম্মুর ও কাঁদার শব্দ শুনতে
পাচ্ছিলাম।
বাবা- কি করিস বাবা?
আমি-এই তো পুলিশ লাইন থেকে বের
হলাম।
বাবা- সকালে খেয়েছিস?
আমি- হ্যাঁ, হোটেলে খেয়ছি...
বাবা- নিজের প্রতি খেয়াল রাখবি, আর
শোন একটুও মন খারাপ করবি না। আর তোর
ফোনে ১ হাজার টাকা পাঠিয়েছি।
আমি- আমার কাছেই তো টাকা আছে। তুমি
টাকা পাঠালা কেন?
বাবা- আরে এটা ঈদ বোনাস? তুই চাকুরী
করিস তো কি হয়েছে? বাবা মার কাছে
ছেলে সব সময় ছোট থাকে। ঠিক আছে
বাবা, ভালো হয়ে থাকিস।
আমি- জি আচ্ছা!
।।
রাস্তা পার হতে, দারোগা স্যার আমাকে
ডাক দিলো, উনি আমার আব্বুর সাথে
একসময় চাকুরী করতো, ভালো লাগে এই রকম
মানুষ পাশে থাকলে মনে হয় বাবা হয়তো
পাশে আছে।
আমি- জি স্যার। আসছি।
স্যার- এই তরে না বলেছি, তুই আমাকে
স্যার ডাকবি না। কাকা বলেই ডাকবি। আর
শোন, রাতে আমার ওখানে খেতে যাবি,
তোর মা আমাদের কতো রান্না করে
খাইয়েছে, তোর কাকী অবশ্য তোর মার
মতো ভালো রান্না করতে পারে না, তাও
তুই আসবি।
আমি- আচ্ছা আসবো।
স্যার- এই ফারহানকে চা দে। তুই কি
সিগারেট খাস?
আমি- কিছুটা চমকে গিয়ে, না না।
স্যার- খেলে খা, সমস্যা নাই, তোর বাপ কে
কিছু বলবো না, তোকে দেখলে তোর বাবার
কথা খুব মনে পড়ে, তোর বাবাকে আমারা
কতো জালিয়েছি, অথচ কোন দিন অভিযোগ
করে নি। আচ্ছা থাক, আমি বাড়ী যাবো।
।।
আমি চা খেয়ে চুপ করে বসে আছি! দুইটা
পিচ্চি মেয়ে আসলো,
মেয়েটা- ভাইয়া, আজকে ঈদের দিন,
আমাদের কিছু খেতে দিন। রাত থেকে কিছু
খেতে পাই নি।
কথা শুনে আমি তাদের দিকে তাকালাম,
একজন মেয়ের বয়স ৯-১০ বছর আর ছোটটা ৪-৫
বছর, ছেরা জামা, আর পিচ্চিটার তো
জামা-ই নাই
আমি- কি খাবা বলো।
মেয়েটা-যা খেতে চাইবো খাওয়াবেন?
আমি- হ্যাঁ বলো।
মেয়েটা- আমারা ভাত খাবো।
আমি- ঠিক আছে চলো।
আমি তাদের নিয়ে একটা হোটেলে প্রবেশ
করতে যাবো, তখন মেয়েটা বলল,
মেয়েটা- ভাইয়া একটা কথা বলি?
আমি- হ্যাঁ বলো।
মেয়েটা- আপনি কতো টাকার খাওয়াবেন?
আমি- তোমারা যতো পারবে, সমস্যা নাই।
আমি চাকুরী করি।
মেয়েটা- তাহলে আমাদের ১ কেজি চাল, ১
কেজি আলু, আর ২ টা ডিম কিনে দিন। আর
আমার কাছে ২২ টাকা আছে ওটা দিয়ে
তেল আর মশলা কিনে নিবো। আমার আম্মু
অসুস্থ উনিও না খেয়ে আছে, আমরা সবাই
মিলে বাড়ীতে খেয়ে নিবো।
।।
আমি তো পুরো শক খেয়ে গেলাম, ১০ বছরের
পিচ্চি বাচ্চা কি বলে?
আমি- আচ্ছা কিনে দিচ্ছি, কিন্তু রান্না
কে করবে?
মেয়েটা- আমি রান্না করতে পারি,
।।
আজব ব্যাপার, একবার এক বড় ভাইয়ার জন্য
বউ দেখতে এক বাড়ী গেছিলাম, মেয়েটা
তখন ডিগ্রী প্রথম বর্ষ, আমার ভালো করে
মনে আছে, খালামনি জিজ্ঞেস করেছিলো,
মা তুমি কি রান্না করতে পারো?
মেয়েটা হা করে তাকিয়ে থাকলো,
অবশেষে ঐ মেয়ের মা বলল, বিয়ের পর সব
শিখে যাবে। অথচ এই মেয়ে তার বয়সের
অর্ধেক আর সে কি না বলছে আমি রান্না
করতে পারি?
।।
আমি চাল, আলু, একটা মুরগী, আর সবজি, তেল
মশলা সব কিনলাম, তারপর বললাম, চলো
তোমাদের বাড়ী।
পাশের বস্তিতেই তাদের বাড়ী। গিয়ে
দেখলাম, ঐ মেয়ের মা শুয়ে আছে। আমাকে
দেখে তাড়াতাড়ি উঠতে শুরু করলো।
মেয়েটা- মা, দেখো, এই ভাইয়া আমাদের
জন্য বাজার করে নিয়ে এসেছে।
আমি- খালা আপনার কি হয়েছে?
খালা- আমার কয়েক দিন থেকে জর হয়েছে।
আমি- তো ঔষধ খান নি কেন?
খালা- দুই মেয়ের পেটে ভাত দিতে পারি
না, কিসের ঔষধ?
।।
আমি মেয়েটাকে বললাম, তোমার নাম কি?
মেয়েটা- ঝরা।
আমি- তুমি সবজি,মশলা রেডি করো, আর
মাংস টা ধুয়ে নাও, (কিনার সময় কেটে
নিয়েছিলাম) আমি আসছি।
।।
কিছুক্ষন পর আমি এক ডাক্তার নিয়ে
আসলাম, উনি কিছু ঔষধ দিলেন।
এরপর আমি, খালা আর ঝরা মিলে রান্না
করলাম।
এরপর ওনার কাছে শুনতে পেলাম, উনি একটা
দোকানে জামাকাপড় সেলাই করে, কয়েক
দিন থেকে যায় নি তাই টাকা পাই নি।
আমি দুপুরের ওখানে খেয়ে, ঝরা আর পিচ্চি
মেয়ে সারা কে নিয়ে বের হলাম।
ঝরা- ভাইয়া আমারা কোথায় যাচ্ছি।
আমি-চলো তো, দেখতে পাবা,
আমি ঝরা আর সারা কে একটা দোকানে
নিয়ে গিয়ে নতুন জামা আর স্যান্ডেল
কিনে দিলাম। তারপর আমাদের পুলিশ
লাইনের সামনে একটা পার্ক আছে ওখানে
নিয়ে গেলাম।
ভাইয়া, আমারা পার্কে যাবো? আমার না
অনেক দিনের শখ পার্কে বেড়ানোর, কিন্তু
আমাদের ঢুকতে দেয় না।
আমি- এবার দিবে, আমি আছি না।
।।
গেটের সামনে যাওয়া তে একজন বলল,
টিকিট, তখন এক পুলিশ বলল, আরে হারামি
ঐ পুলিশের লোক।
আমি ভিতরে যাবার পর বলল, আরে ফারহান
ভাই, এই পিচ্চি গুলো কে?
আমি- আমার খালাতো বোন, মন খারাপ
তাই ঘুরতে নিয়ে আসলাম,
পার্কের লোক- এই পাস নিয়ে যান, তাহলে
আর টাকা লাগবে না। বলবেন পুলিশ।
।।
ঝরা- ভাইয়া আপনি পুলিশ?
আমি-হ্যাঁ, কেন পুলিশ দেখে খুব ভয় লাগে?
ঝরা- এক দিন রাস্তাই দেখলাম, একটা
মানুষ কে খুব মারছে, তখন থেকে খুব ভয়
পাই।
আমি- হয়তো সে খারাপ কাজ করেছে।
আমাদের কাজ খারাপ মানুষকে মারা, আর
ভালো মানুষকে সাহায্য করা।
ঝরা- তার মানে আমরা ভালো মানুষ তাই
আমাদের সাহায্য করছেন?
আমি- আমি আর কিছু বলার ভাষা পেলাম
না।
।।
বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ওদের নিয়ে
ঘুরলাম, আর সারা এটা খাবো, ওটা খাবো।
মাঝে মাঝে ঝরা বকা দিচ্ছে, আমি
বললাম থাক না কি খাবে খাক,
।।
সন্ধ্যায় আমি ঝরা কে বাড়ী রাখতে
গেলাম,
আসার সময় ঝরা বলল, আজকের দিন টা
আমাদের জন্য স্বপ্নের মতো ছিল, এই ঈদ
আমি কোন দিন ভুলবো না। আপনি কি আর
কোন দিন আমাদের বাড়ী আসবেন না?
।।
মাঝে মাঝে, পিচ্চি মেয়ে এমন প্রশ্ন করে
যে উত্তর দেওয়া যায় না। সারা আমার
প্যান্ট টা টেনে ধরলো,
আমার চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে গেলো,
সত্যি বলতে আমি যখন নিজের বাড়ী থেকে
চাকুরী করতে আসি তখন ও এতো মন খারাপ
হয় নি।
।।
আমি বললাম, ভাই কি বোন কে ছাড়া
থাকতে পারে? আমি কালকে আবার
আসবো। আর তোমার যখন ইচ্ছা পুলিশ লাইন
চলে আসবা, বলবা ফারহান আমার ভাইয়া
হয়।
আমি সারা কে কোলে নিয়ে একটা চুমু
খেলাম, বললাম, এখন যায়। সে কিছু বলল না,
এতটুকু মেয়ের কি অভিমান?
আমি আবার বললাম, আরে পাগলী কাল
আবার আসবো তো। তখন সেও আমাকে একটা
চুমু দিলো।
।।
আসার সময়, খালাকে বললাম, আমি
আপনাকে সামনে মাসের বেতন পেয়ে একটা
সেলাই মেশিন কিনে দিবো, তাহলে টা
দিয়ে আপনার সংসার চলে যাবে, তার ওপর
তো আমি আছি, যতটা পারি ছেলের
দায়িত্ব পূরণ করার চেষ্টা করবো, আপনি
ওদের স্কুলে পাঠানোর ব্যাবস্থা করেন,
আমি সব খরচ দিবো।
।।
ওদের কে রেখে আমি চলে আসলাম, সত্যি
বলতে ঝরার কথায় ঠিক, আজকের মতো সুন্দর
আর ভালো ঈদ আমিও কোন দিন কাটায় নি।
অফিস যেতেই আমাকে বলল, পোশাক পরে
নাও, ডিউটিতে বের হতে হবে।
আমি- জি স্যার। আমি দ্রুত রেডি হয়ে
নীচে আসলাম,
আমি- কোথায় যাবো?
স্যার- বাজারের মধ্যে নাকি ঝগড়া
হয়েছে...।
।।
আমরা পুলিশ! না আমাদের আছে ঈদ না
ছুটি। আমারা ক্লান্তহীন মাবব! যারা
অপরিচিত ভালোবাসার মধ্যে বেঁচে
থাকে।
//
{{{{{{সমাপ্ত}}}}}}}}
Tag: othersdiscusionlife storyall poemsharelove storylife storywapkiz codetutorial tag codetutorial tag code
পোস্টটি কেমন লেগেছে তা জানাতে একদম ভুলবেন না !
মন্তব্য 0 টি আছে।
Need Login or Sing Up
কোন মন্তব্য নেই।