[ অবশেষে রোদ্দুর ] অবশেষে রোদ্দুর - Oboshese Roddur
লেখক: SMsudipBD About 2020s ago |
অবশেষে রোদ্দুর - Oboshese Roddur
বিয়ের বাজারে আমার চাহিদা তরতর করে শূন্যের কোঠায় নেমে এলো কারণ আমি ধর্ষিতা।
৫'৪" উচ্চতার ছিপছিপে গড়নের উজ্জ্বল শ্যাম বর্ণের আমি অচিরেই সবার নজর কাড়তাম। তার ওপর আবার প্রকৌশলি হওয়ার হাতছানি।
সবমিলিয়ে আত্মীয়স্বজন এলাকার মানুষ, পাড়াপ্রতিবেশী, তাদের আত্মীয় স্বজন এমনকি আশেপাশের এলাকার অনেকেরই আকাঙ্ক্ষিত পাত্রী ছিলাম আমি। উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা থেকে ব্যবসায়ী সবাই আমার রিজেক্ট লিস্টে ছিলো।কারণ আমার ফোকাস তখন কেবল মাত্র পড়াশোনা আর ক্যারিয়ার। তবে এখন আর কেউ হয়তো আমাকে বিয়ের করার কথা স্বপ্নেও ভাববে না।
[IMG]https://smsudipbd.wapkiz.mobi/download/dl4/cf7e286672924e5065fe735f0c3890a3/smsudipbd+wapkiz+mobi/obosese-roddur-(smsudipbd.wapkiz.mobi).jpg[/IMG]
আমার বাড়ি গ্রামেই বলা চলে। তবে ঠিক অজপাড়া গা নয়। শহরের অনেক সুবিধাই এখানে পৌছেছে। তবুও এখানে মেয়েদের দশম শ্রেণী পেরুবার পরই যখন বিয়ের জন্য উঠেপড়ে লাগে সেখানে প্রকোশল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া আমাকে বিয়ের জন্য ঘিরে ধরাটাই স্বাভাবিক। হতোও তাই। দেখা যেত ইন্টারমিডিয়েট পেরুতে পারিনি এমন কেউ ও বিয়ের প্রপোজ দিতে। প্রচন্ড রেগে আমি যখন হৈ চৈ করতাম মা বলতেন " মেয়ে যখন হয়েছিস আর বিয়ের বয়স যখন হয়েছে যে নিতে পারবে সে ও আসবে, যে নিতে পারবে না সে ও আসবে। এতো রাগ করার কিছু হয়নি।
আমি ঝিনুক। বাবা একজন সরকারী ব্যাংক কর্মকর্তা। আমরা দু বোন। আমি বড় আর ঝুমুর আমার দু বছরের ছোট।বেশ সুখেই ছিলাম আমরা। বাবা উচ্চশিক্ষিত বলেই আমাকে নিয়ে স্বপ্নটাও বেশ উচু দরের দেখেছিলেন।
গ্রামে বাস করলেও বাবা আমাদের অন্যভাবে গড়ে তুলেছেন। স্বপ্ন দেখিয়েছেন উন্নত জীবনের। শিখিয়েছেন নৈতিকতা। আমরা দুবোনই পড়াশোনায় বরাবর বেশ ভালো। কলেজের গন্ডি পেরিয়ে স্বপ্ন পূরণের জন্য আমাকে নিজের বিভাগ ছেড়ে পাড়ি জমাতে হলো অন্য বিভাগে। প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছি বলে বাবা খুব খুশি,সাথে গর্বিত ও।
এদিকে বাড়িতে বিয়ের জন্য একের পর এক প্রস্তাব এসেই যাচ্ছে। বাবা আর আমি নাকোচ করছি সব। কারণ এখন মুল টার্গেট ইন্জিনিয়ারিং কমপ্লিট করা। স্বপ্নের এতো কাছে এসে আমার ফোকাস নষ্ট করতে চাচ্ছিলেন না বাবা। বিয়ে হলে পড়াশোনায় একটা সুদূর প্রসারী প্রভাব পড়বে। তাই আপাতত বিয়েতে মত নেই বাবার।
এতে আমারও কিছুটা লাভ হলো।
আমার জীবনে ততোদিনে একজন স্পেশাল মানুষের আগমন ঘটেছে। আমার এক ব্যাচ সিনিয়র একজনের সাথে রিলেশন হয়ে যায় আমার। তাই বিয়ে যতো পিছানো যায় আমার জন্য ততোই মঙ্গল।
কিন্তু আমার মা আমাদের এই সিদ্ধান্তের ঘোর বিরুদ্ধাচরণ করে আসছেন। ভালো ছেলে পাওয়া গেলে বিয়ে দিয়ে দেওয়ার পক্ষেই সে।
বাবা বলতেন " বিয়ে তো দিবোই। আজ না হোক কাল। তবে মেয়েকে সাবলম্বী না করে নয়।
বাবা আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করলেও আমাদের উচ্ছন্নে যেতে দেননি। যথেষ্ট শালীনতার মধ্যেই থাকতাম আমরা।
কিন্তু একটা ঘটনা সব এলোমেলো করে দিয়েছে।
ঈদ উপলক্ষে ছুটি পড়ায় বাড়ির আসছিলাম সেদিন।ছুটি আরও দু একদিন আগেই শুরু হয়েছে। কিছু প্রজেক্ট এর খসড়া বিভাগীয় প্রধানকে জমা দিতে হবে ঈদের পরপরই।তাই প্রজেক্ট টা শেষ করে আসতে হলো বলে ঈদের আগের দিন রওনা হতে হলো আমাকে।
তাও আবার দুপুরের পর। গ্রামে যখন পৌছালাম তখন সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত নেমেছে। ফোনের চার্জ গাড়িতেই শেষ হয়ে গেছে বলে বাবাকে কল করে বাজার থেকে আমাকে এগিয়ে নিতে বলতে পারিনি।
বাজারে নেমে বাড়ির পথে হাটা ধরলাম। আমি এই গ্রামের মেয়ে।পথঘাট মানুষজন সব চেনা। ভয় বা শংকা কিছুই কাজ করেনি আমার মধ্যে। আমি ঘূর্ণাক্ষরেও ভাবতে পারিনি কি ভয়ংকর ঘটনা অপেক্ষা করছে আমার জন্য।
বাজার থেকে আমার বাড়ি খুব বেশী দূরে না। মাটির রাস্তা বাজার থেকে বাড়ি অবধি চলে গেছে। সে পথ ধরেই হাটছিলাম। পেছনে কারও পায়ের শব্দ পেয়ে ঘুরে তাকাতেই কেউ আচমকা আমার মুখ চেপে ধরে। চোখ ও বেধে ফেলে। লোকসংখ্যা ২/৩ জন অনুমান করলাম। রাস্তা থেকে আমাকে ওরা কোথাও একটা নিয়ে যাচ্ছে। সর্বাত্মক চেষ্টা করেও পেরে উঠলাম না ওদের সাথে।
কোথায় নিয়ে যাওয়া হলো বুঝতে পারিনি। মানুষরূপী সেই নরপিশাচ হামলে পড়লো আমার ওপর। আমার হিজাবটা দিয়েই হাত বেধে রাখা হলো। আমার কিছুই করার ছিলো না। সংখ্যায় বেশি হলেও আমার ওপর একজনই অত্যাচার করেছিলে। নারকীয় অত্যাচার।
কাঁদা ছাড়া সে মূহুর্তে আমার আর কিছুই করার ছিলো না।
জানোয়ারটা আমার মুখে গুজে রাখা রোমালটা সরিয়ে দিয়ে চলে যায়।
কতক্ষণ সেখানে পড়েছিলাম জানিনা।
আমার গোঙ্গানীর শব্দে পাশ দিয়ে যাওয়া লোকজন এগিয়ে আসে।
বাবাকে খবর দেয়। আমার দেরী হচ্ছে বলে বাবাও বের হয়েছিলেন।পথিমধ্যেই আমার খোজ পেয়ে ছুটে এলেন। সেখান থেকে আমাকে বাড়িতে নেওয়া হলো। তবে আমার শরীরে কোনো ক্ষত হয়নি। ক্ষত হয়েছে মনে।
পুরো গ্রামে এই একটাই কানাঘুষা। জয়নাল সাহেবের মেয়ে ধর্ষিতা।
রাতারাতি আমার পজিশন পাল্টে গেলো।
আমার এতোবড় সর্বনাশ যে বা যারা করেছেন বাবা তাদের ছাড়বেন না বলে হম্বিতম্বি করছেন। হিতৈষীরা বুদ্ধি দিলো এতো মান সম্মান যতোটুকু আছে সেটাও যাবে। বাবা কারও কথা কানে তুলছেন না। তিনি এর শেষ দেখে ছাড়বেন। এরমধ্যেই বাড়িতে একটা উড়োচিঠি এলো। কে যেন দরজায় নক করে চিঠিটা রেখে চলে গেছে।
" বেশি বাড়াবাড়ি করবেন না স্যার। মামলা করবেন শুনলাম, তো কার বিরুদ্ধে করবেন? জানেন এসবের পেছনে কে আছে?
বড় মেয়ের বিচার চাইতে গিয়ে ছোট মেয়ের সর্বনাশ ডেকে আনতে না চাইলে এসব মামলা করার কথা ঝেড়ে ফেলুন। আপনার বড় মেয়ের সাথে যা হয়েছে ছোট মেয়ের সাথে একই ঘটনা ঘটলে সমাজে আর মুখ দেখাতে পারবেন? একটু ভেবে দেখবেন।
মা এবার তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলেন।
" হলো তো এবার। ষোলো কলা পূর্ণ হলো বাবা মেয়ের। এবার ছোট জনের জীবনও নষ্ট করার পথে। ধন্য তোমরা।
জীবনে এতো বড় ঝড় উঠবে কখনও ভাবিনি। প্রতিনিয়ত কথার আঘাতে ঝাঁঝড়া হয়ে যাচ্ছি আমি আর বাবা।
আত্মীয়স্বজন, পাড়াপ্রতিবেশী থেকে শুরু করে সবাই সান্তনা দেওয়ার ছলে
কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দিতে ব্যস্ত। সব অপরাধ যেনো আমাদের। আরও আগে বিয়ে দিয়ে দিলে আজ এমন দিন দেখতে হতো না। মেয়েকে ইন্জিনিয়ার বানানোর স্বপ্ন দেখে বাবা যেন মস্ত বড় অন্যায় করে ফেলেছেন।
বাবার পরিচিত একজন পুলিশ অফিসার আছে। তারমাধ্যমেই বাবা রাখঢাক করেই মামলা করেছেন। এর শেষ সে দেখবেই। পুলিশও গোপনেই অনুসন্ধান করছে।
আমার এই দুর্ঘটনার কথা ভার্সিটিতেও পৌছে গেছে। পাশের এলাকার এক ছেলে পড়ে আমাদের ভার্সিটিতে।আমারই ব্যাচমেট। তার সুবাধেই খবর ওখানেও পৌছে গেলো।
তবে সেখানে বেশি সুবিধা করতে পারেনি খবরটা। আমার ফ্রেন্ড আর টিচার রা খবরটাকে থামিয়েছেন অল্পতেই। আমাকে ভাইরাল করতে দেননি তারা। আমাকে বেশ মোটিভেট করে আসছেন। আমাকে থেমে গেলে চলবে না, সামনে আমার জন্য আরও অনেকটা পথ বাকি রয়ে গেছে। স্বপ্ন ছুতে হবে আমাকে।ভেঙ্গে পড়লে চলবে না।
আমার ভেতরটা ভেঙ্গে দুমড়ে মুচড়ে গেছে। আমার ভালোবাসার মানুষটাও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। কি অদ্ভুত! এই মানুষটা কত মুগ্ধতা নিয়ে তাকিয়ে থাকতো আমার দিকে।
সেই ঘটনার পর সব কিছু থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলাম।
রুম অন্ধকার করে কেদেই চলেছি অনবরত।রাফির কল পেয়ে মনে হলো
আশার আলো পেয়েছি।
" ঝিনুক যা শুনলাম তা কি সত্যি?
কল রিসিভ করে এমন কথা আশা করিনি আমি।
" হ্যা সত্যি।
ওপাশের নিরবতা ভেদ করে রাফির দীর্ঘনিশ্বাস আমি ঠিকই শুনতে পাচ্ছি।
" কিছু বলছো না যে?
" আসলে ঝিনুক আমার পরিবার কেমন তা তো তুমি জানো। ওরা কত পজেসিভ বুঝোই তো।
" কি বলতে চাচ্ছো রাফি? আমাদের সম্পর্কটা থাকবে না এটাই তো?
" আমার পরিবার মানবে না ঝিনুক।
ভুল বুঝো না।
" না, ভুল বুঝিনি। ভালো থেকো।
অবশেষে রোদ্দুর - Oboshese Roddur
কল কেটে ফোনটা বিছানায় রেখে জানালার পাশে দাঁড়ালাম। রাফির সাথে পরিচয় টা হুট করেই হয়েছিলো।
হিজাব পড়ে যেতাম বলে আমার ডিপার্টমেন্ট ছাড়া অন্য কেউ তেমন চিনতো না আমায়।
বসন্তবরণ অনুষ্ঠানে ফ্রেন্ডসদের জোড়াজুড়িতে শাড়ি পরতে হলো।
খোপায় ফুল গুজে বসন্তকে বরণ করার উৎসবে অংশগ্রহণ।
" আপনাকে খোলা চুলে আরও বেশি সুন্দর লাগতো।
কথাটা শুনে পেছনে ঘুরে দেখলাম বেশ সুদর্শন আর পরিপাটি একজন ছেলে কথাটা বলেছে। চিনতে পারিনি বলে সামনে তাকাতেই সে আবার বললো
" সত্যি বলছি, চুলগুলো খুলে দিন, আপনার সৌন্দর্য দ্বিগুণ বেড়ে যাবে।
আমি কোনো উত্তর না দিয়েই সেখান
থেকে কেটে পরি।
ফ্রেন্ডসদের কাছ থেকে জানলাম আমাদের এক ব্যাচ সিনিয়র ওনি। নাম রাফি। এদিকে রাফিও আমার পরিচয় জেনে নিয়েছে ততোক্ষণে।
পুরো অনুষ্ঠান জুড়ে রাফির সাথে অনেকবার চোখাচোখি হয়েছে।
সে একদৃষ্টে তাকিয়ে ছিলো আমার দিকে। আমি ভীষণ অস্বস্তিকর অবস্থায় পরে গেলাম। আমার দিকে কেউ তাকিয়ে থাকলে আমার খুব হেজিটেট
হয়।
পরদিন ক্লাস ছিলো।
ক্লাস শেষ করে বের হয়ে ফ্রেন্ডসদের সাথে কথা বলছিলাম।
" কারও প্রশংসা করলে তাকে ধন্যবাদ দিতে হয় এই ফর্মালিটি টুকু তোমার থেকে আশা করেছিলাম।
কথাটা বলে রাফি পাশে এসে দাঁড়ালো।
" অপরিচিত কারও সাথে ফর্মালিটি দেখাতে আমি অভ্যস্ত না।
" এখন তো আর অপরিচিত নই। নিশ্চই আমার পরিচয় জেনেছো তুমি?
" এখন তো ফর্মালিটি দেখাতেই পারো।
" ওকে, ধন্যবাদ।
" কেমন যেন প্রাণহীন হলো। আচ্ছা যাই হোক। তুমি আসলেই অনেক সুন্দর।
ফ্রেন্ডসদের সামনে এমন কথায় কিছুটা লজ্জিত হলাম। ওরা যে মুখ টিপে হাসছে তা দেখতেই পাচ্ছি।
রাফি এমনই ছিলো। প্রপোজাল ও সবার সামনেই দিয়েছিলো।
কিভাবে যেন আমিও দুর্বল হয়ে গেলাম ওর প্রতি। আমাদের রিলেশনের কথা মোটামুটি কমবেশী সবাই জানতো ভার্সিটির।
রাফি আমার পাশে বসে অপলক তাকিয়ে থাকতো। আমি কথা বলতাম আর সে চুপচাপ শুনে যেতো। হঠাৎ ওর দিকে চোখ পড়লে দেখতাম ওর চোখজুড়ে মুগ্ধতা খেলা করছে।
মাঝেমধ্যে বলে উঠতো "আল্লাহ তোমার মধ্যে এতো মায়া কিভাবে দিলো? কেউ এতো মায়াবী কিভাবে হতে পারে?
আর সে ই রাফি এখন পরিবারের দুহাই দিয়ে আমার থেকে মুক্তি চাচ্ছে। আহা জীবন!
মানসিকভাবে একেবারে ভেঙ্গে পড়েছি ততোদিনে। চারদিকে এতো কথার আঘাত। সব অপরাধ আমার ঘাড়ে চাপাতেই সবাই ব্যস্ত। আমার হিতৈষীরা কষ্ট পেলেও আমার হেটার্সরা সুযোগ পেয়ে বসে। আত্নীয় থেকে শুরু করে পাড়াপ্রতিবেশীর অনেকেই ইনিয়ে বিনিয়ে কথার খোচায় দগদগে ঘা করে দিয়েছে ভেতরটায়।
এই জীবন থেকে খুব করে মুক্তি চাচ্ছি আমি। সে ঘটনায় আমার তো কোনো দোষ ছিলো না। কথাটা কাউকেই বলতে পারিনি আমি।
গোসল শেষে কাপড় বাইরে মেলতে এসে শুনলাম আমার ছোট চাচী তার মেয়েকে শাসাচ্ছে " এতো পড়ালেখার দরকার নেই। পড়ালেখা করে মেম সাহেব হতে গিয়ে ইজ্জত খোয়ানোর কোনো দরকার নেই। ঘরে কাজকর্ম শিখ ভালো ছেলে দেখে বিয়ে দিয়ে দিবে।
চাচী যে কথাগুলো আমাকে শুনাচ্ছিলেন তা আমি বেশ বুঝতে পেরেছি। দীর্ঘশ্বাস ছাড়া আমার আর কিছুই নেই বলার।
রুমে এসে দরজা লক করতেই মা দরজায় কড়া নাড়া শুরু করলেন।
" কি হয়েছে মা?
" দরজা বন্ধ করেছিস কেনো? দরজা বন্ধ করবি না একদম।
" ভয় পেও না মা । আমি কিছু করবো না। এই অভিশপ্ত জীবন থেকে এতো সহজে মুক্তি নেই আমার।
" দরজা বন্ধ করার দরকার নেই। আমরা বিপদে পড়েছি এখন মানুষ কথা বলবেই। ভাত বেড়েছি খেতে আয়।
দুদিন পর একজন বেশ দয়া দেখিয়ে আমাকে বিয়ে করার জন্য বাড়িতে প্রস্তাব দেয়। বিপত্নীক পঞ্চাশোর্ধ একজন বিয়ে করতে রাজি হয়েছে আমাকে এই সুখবর নিয়ে আসে এক ঘটক।
মা দেখলাম কিছুই বললো না। নিরবে শুনে যাচ্ছেন লোকটার কথা।
" মা তুমি ওনাকে চলে যেতে বলো। আর কখনও এমন কোনো প্রস্তাব নিয়ে সে যেন এখানে না আসে। আমার এতো খারাপ দিন এখনও আসে নি। ওনাকে যেতে বলো।
" তুই ঘরে যা।আমি তো কথা বলছি ই।
" তুমি কি বলছো তা তো আমি দেখতেই পাচ্ছি।
আর আপনি এখনও বসে আছেন কেনো? যেতে বলা হয়েছে তো আপনাকে।
" মাইয়া মানুষের এতো দেমাগ ভালো না। এই দেমাগ এর জন্য তো সর্বনাশ হইছেই সামনে আরও হবে।
" কি হবে সেটা আমি বুঝে নিবো। আপনি আসুন।
অবশেষে রোদ্দুর - Oboshese Roddur
লোকটা বিড়বিড় করে কি যেন বলে চলে গেলো।
" এতো কিছুর পরও তোদের শান্তি হয়নি। এতো কথা কে বলতে বলেছে তোকে। কেউ বিয়ে করতে রাজি হবো তোকে?
" তাহলে কি তুমি ওই বুড়ো লোককে বিয়ে করতে বলছো নাকি?
" আমার কথা এই বাড়িতে কেউ শুনে কখনও? আমার কথা শুনলে এই দুর্দিন দেখতে হতো না। সবাই তো বেশী বুঝিস। এখন তোর জন্য ছোটমেয়েটার জীবনও নষ্ট হয়ে যাবে। এরপরও তোর হুশ হলো না। উঠতে বসতে এতো লোকের এতোরকম কথা শুনতে আর ভালো লাগে না।
" একদিন তোমাদের সবকিছু থেকে মুক্তি দিয়ে চলে যাবো মা। তখন আর কেউ কিছু বলবে না। তখন খুশি হবে তো?
" হ্যা, তুই তো আমার শত্রু খুশি হবো না। অনেক খুশি হবো।
আমি আর কথা না বাড়িয়ে রুমে চলে এলাম। আসলেই আমার সময় এতো খারাপ হয়ে গেলো?
বুক ফেটে কান্না আসছে আমার।
আমি তো কোনো অন্যায় করিনি। তবুও আমাকে কেনো এতো লাঞ্চনা সহ্য করতে হবে?
সারাদিন আর রুম থেকে বের হইনি। কিছু খাওয়া ও হয়নি।
কান্না করে কখন ঘুমিয়ে গেছি জানিনা।
বাবার ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো। প্রায় সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে তখন।
"সারাদিন কিছু না খেয়ে শুয়ে আছিস, এমন করলে চলবে?
বাবার কথার চোখটা আবারো ভিজে উঠলো।মুখটা অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিলাম
" মন খারাপ করিস না মা, আমাদের এই দুঃসময় সবসময় তো আর থাকবে না। একদিন ঠিকই রোদ্দুরের দেখা পাবো আমরা। আর তোর মায়ের কথায় কিছু মনে করিস না। মা গুলো এমনই হয়। খুব বেশী ভালোবাসে বলেই কষ্ট টাও বেশী পায়। ছেলেমেয়েদের কথা শুনিয়ে শান্তি খুঁজে। তোকে কথা শুনিয়ে নিজেই এখন পরে পরে কাঁদছে।
" আমি মায়ের কথায় কিছু মনে করিনি বাবা। আমার সাথেই কেনো এমন হলো? জানো বাবা এই ক'দিনে একটা ব্যাপার বুঝেছি এতো সংগ্রাম করে বেচে থাকতে যতটা সাহস লাগে মরে যেতে তার চেয়ে অনেক বেশী সাহস লাগে। আমার ওতো সাহস নেই বাবা।
" তুই এসব কেনো ভাবছিস।তুই তো কোনো ভুল করিসনি মা। তুই কেনো শাস্তি পাবি। যারা অন্যায় করেছে দেখবি আজ নাহয় কাল তারা ঠিক শাস্তি পাবে। তুই নিজের কোনো ক্ষতি করার কথা একদম ভাববি না।
" ওরা তো বেশ আছে বাবা।অথচ আমি প্রতিনিয়ত মরে যাচ্ছি । আমার জীবনটা কালো মেঘে ছেয়ে গেছে। এই মেঘ কেটে রোদের দেখা আমি কখনওই পাবো না।
" অবশ্যই পাবি মা। দেখে নিস খুব শিগ্রই পাবি। চল তো এখন আমার সাথে চল তো খেয়ে নিবি। তোর মা ও সারাদিন না খেয়ে আছে।
" আমার ভালো লাগছে না বাবা।
" তুই না খেলে তোর মা ও খাবে না। আমাদের জন্য হলেও তোকে ঘুরে দাঁড়াতে হবে মা। এভাবে ভেঙ্গে পড়লে চলবে না। তোকে তো আমি এভাবে তৈরি করিনি যে এতো অল্পতেই তুই থেমে যাবি। তোকে লড়তে হবে, ঘুরে দাঁড়াতে হবে। হেরে গেলে চলবে না।
বাকী পর্ব গুলো আমার আইডিতে আছে।যারা পড়তে ছান তারা আমাকে ফেন্ড রিকুয়েষ্ট দিয়ে সাথে নক করবেন তাহলে তাড়াতাড়ি এড করে নিবো
চল উঠ দেখি। আমরা আজকে একসাথে খাবো।
অগ্যতা আমাকেই উঠতেই হলো। আমাকে ওদের জন্যই বাচতে হবে। আমি যদি নিজেকে শেষ করে দেই তাহলে এ বাড়ি থেকে শুধু আমার নয় আরও দুটো লাশ বের হবে। আমার কিছু হলে আমার বাবা মা ও মরে যাবে।
আচ্ছা বাবার কথা সত্যি করে আমার জীবনে কি আসলেই আবারো রোদ্দুর ফিরে আসবে?
চলবে,,
#অবশেষে_রোদ্দুর
part:1
লেখা- আতিয়া মিম
অবশেষে রোদ্দুর - Oboshese Roddur
Tag: othersdiscusionlife storyall poemsharelove storylife storywapkiz codetutorial tag codetutorial tag code
পোস্টটি কেমন লেগেছে তা জানাতে একদম ভুলবেন না !
মন্তব্য 0 টি আছে।
Need Login or Sing Up
কোন মন্তব্য নেই।