গল্প : বাবা by SMsudipBD
লেখক: SMsudipBD About 2020s ago |
এই নার্স তোমার মাথায় ওড়না নেই কেন??
স্ট্রেচার এ করে কেবিনে নিয়ে যাওয়ার সময় একটা
নার্স কে দেখে বাবা কথাটি বললেন।
থ হয়ে গেলাম একদম,
[IMG]https://smsudipbd.wapkiz.mobi/download/dl4/86b2ed680b0b72544808a040d36c1734/smsudipbd+wapkiz+mobi/mone-rekho-(smsudipbd.wapkiz.mobi).jpg[/IMG]
মেয়েটা অল্পবয়সী,
ঠিক কি বুঝলো কে জানে মাথায় ওড়নাটা দিয়ে বিরবির
করে চলে গেলো।
মায়ের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলাম।
মা নিচু স্বরে বাবাকে বললেন
"এই তুমি চুপ থাকো যখন তখন অচেনা কাউকে উপদেশ
দিবেনা"।
বাবা মায়ের দিকে তাকিয়ে চুপ হয়ে গেলেন।
গত কয়েকদিন ধরে অসুস্থতা এতটাই তীব্র হয়েছে যে
বাবাকে কেবিনে ভর্তি করার প্রয়োজন হয়ে পড়ে।
কেবিনে ভর্তি করার চারদিন পর বাবার শরীরের
পরিস্থিতি আরো খারাপ হলো,
ডাক্তার জানিয়ে দিলেন রুগির অবস্থা বুঝা যাচ্ছেনা
আইসিউতে পাঠানো লাগবে।
স্থির দৃষ্টিতে বাবার দিকে তাকিয়ে আছি,
মানুষটা এই কয়দিনে কেমন যেন শুকিয়ে গেছে,
বড় ভাইকে আবার ফোনে ট্রাই করছি কিন্তু ধরছেন না।
কাল রাতেই তাকে জানানো হয়েছে বাবার অসুস্থতা,
গ্লাসের ওপাশ থেকে তাকিয়ে দেখলাম বড় বোন চলে
এসেছে,
কখন এসেছে কে জানে,
বাবার পাশে বসে আছে।
বাবা কথা বলছেন তার বড় মেয়ের দিকে তাকিয়ে।
আমি জানি বাবার প্রথম কথাই হবে কিরে তোর জামাই
কেমন আছে তোকে কষ্ট দেয়না তো আবার??
এর উত্তর ও আমার জানা, বড় আপু বলবেন
না বাবা ও ভালো আছে আর তোমার জামাই আমাকে
কোন কষ্ট দেয়না।
কথাটির সাথে আমি একমত কারন বড় দুলাভাই নিপাট
ভদ্রলোক,একজন সরকারি কলেজ এর সহকরী অধ্যাপক,
ধার্মিক তাবলীগ ওয়ালা।
মায়ের কোলে বসে রয়েছে বড় আপুর ছেলে অনুপ, সে
চুপচাপ তার নানা ভাইকে দেখছে,
বয়স আর কতইবা হবে দশ বা এগারো, বড় আপুর দুই সন্তানের
বড় সন্তান।
রাত দুইটা চল্লিশ মিনিটে বড় ভাইয়ার ফোন আসলো
বললাম বাবার অবস্থা ভালো না তুমি আসো তারাতারি।
ভাইয়া কি বুঝলো কে জানে বললো আচ্ছা আমি ট্রেনে
করে আসছি।
ভাইয়া আর্মির একজন কর্নেল,
রামু ক্যান্টনমেন্ট এ ডিউটিতে আছেন।
জানিনা কখন আসবেন।
সকালের দিকে বাবার পরিস্থিতি আরো খারাপ হলো,
পাচ ভাইবোন এর মধ্যে আমি সবথেকে ছোট,
বড় বোন আর মেজো বোন এসেছে।
হসপিটাল এ বাবাকে দেখাশুনা মা আর সেজো বোন
করছেন,
দুপুর নাগাদ ডিউটিরত ডাক্তার ঘোষনা করলেন বাবার
অবস্থা আরো অবনতি হয়েছে আজকে রাতেই দ্বিতীয়
অপারেশনটা করে ফেলতে হবে।
বাবাকে আইসিউতে মুখে মাস্ক পড়িয়ে শুইয়ে রাখা
হয়েছে।
গল্প : বাবা
বড় বড় নিঃশেষ নিচ্ছেন।
মরণঘাতি ক্যান্সার এর শেষ ধাপে আছেন বাবা।
চোখটা ফেটে পানি চলে আসছে,
মনটা ভেঙে পড়ছে ভিষণ ভাবে।
বিকাল নাগাদ একটু সুস্থতা বোধ করলে মাস্ক সরিয়ে
রাখা হয়েছে।
বাবা ফিসফিস করে আমাকে ডাকলেন
:-কিরে শফি আসেনাই?
আমি বললাম না বাবা তবে চলে আসবে,
শফি বড় ভাইয়ার নাম,
আসল নাম শফিকুল ইসলাম, বাবা আদর করে শফি ডাকে।
বাবা খুব অল্প বয়সে বিয়ে করেছিলেন,
বাবার বয়স যখন ২২ বছর তখনি বড় ভাইয়ের জন্ম।
একটা সময় এমন ও হয়েছিলো বাবা আর ছেলে মনেই হতো
না তাদের দুইজনকে।
খুব অল্পবয়সে বিয়ে এবং বাবা হওয়ার কারনে বড়
ভাইয়ের বয়স হওয়ার সাথে সাথেই বাবার সম্পর্কটা
ভাইয়ার সাথে বন্ধুর মতই হয়ে গিয়েছিলো।
খুব ভালোবাসেন বাবা ভাইয়াকে।
ভাইয়ার বিএমএর তিন বছরের ট্রেনিং এর দিন গুলোতে
ভাইয়ার জন্য প্রায়ই নাকি বাবাকে কাদতে দেখতেন মা।
আমি তখন খুব ছোট ছিলাম,
বাবার প্রিয় আরো একজন মানুষ আছে তার ছোট মেয়ে
শীলা।
আমার তিন বছরের বড় শীলা আপুকে আম্মিজান বলে
ডাকেন বাবা
আপু এখনো আসেনি।
হয়তো একটু পর ই এসে পড়বে।
মাগরিব এর সময়ে মা ডেকে বললেন "মুসা তোর বাবা ওজু
করতে চাচ্ছেন একটু ওজু করিয়ে আন",
আমি গিয়ে বাবার কাছে গেলাম কোলে করে বাথরুমে
নিয়ে গিয়ে ওজুটা করিয়ে আনলাম।
ইশারায় নামাজ আাদায় করেই আমাকে ডাকলেন।
আমি চুপচাপ বাবার মুখের কাছে মাথা নামিয়ে
আনলাম,বাবা বলছেন
:-কিরে নামাজ পড়েছিস
আমি বললাম "হ্যা বাবা"।
বাবা খুশি হলেন খুব।
এ এক অদ্ভুত মানুষ বাবা।
কোনদিন নামাজ নিয়ে কারো সাথে কম্প্রোমাইজ করেন
নি।
একবার নামাজ না পড়ে ইচ্ছে করে ঘুমিয়ে ছিলাম।
বাবা ডেকে দেওয়ার পর ও উঠি নি।
সেদিন ঘর এ এসে লাঠি নিয়ে ধাওয়া করতে করতে
আমাকে পুকুরে নামালেন।
তার কাছে নামাজ পড়াটা সব কিছুর উপরে স্থান দিতেন।
শীলা আপুর বিয়েটা হয় তার ইউনিভার্সিটির
ক্লাসমেটের সাথে।
বাবা যখন শীলা আপুর বিয়ের জন্য পাত্র খুজছিলেন
তখনি শীলা আপু ভয়ে ভয়ে বলে দেয় দুলাভাইয়ের কথা।
বাবা কিছুই বলেন নি তার ছোট মেয়েকে
শুধু দুলাভাইকে ডেকে পাঠালেন,
তিনিদিন আমাদের বাসায় দুলাভাইকে রেখে দিলেন।
হয়তো আপুর কথা মতই বা মানুষটা সত্যিকার ভালো
ছিলো দেখেই নামাজ টা ঠিক ঠাক মত আাদায়
করেছিলেন দুলাভাই,
তিনদিন পর বাবা দুলাভাইকে বললেন বেটা তুমি তো
ভালো ছেলে তুমি সম্পর্কে কেন জড়ালে?
দুলাভাইয়ের সরল সোজা জবাব ছিলো তার শীলা আপুকে
ভালো লাগে এবং শীলা আপুও তাকে পছন্দ করে তিনি
চেষ্টা করছেন বের হতে কিন্তু পারছেন না।
বাবা কি ভাবলেন কে জানে দুলাভাইকে নিয়ে সোজা
দুলাভাইয়ের বাবার বাড়িতে যেয়ে বললেন বিয়ের কথা।
বললেন নিজেও ছাত্র জীবনে বিয়ে করছিলেন,
তার ছোট মেয়ে যেহেতু পছন্দ করেই ফেলছে তাহলে
খারাপ কাজে জরিয়ে পড়ার আগেই বিয়ে দিয়ে
দেওয়াটা ভালো।
এরপর খুব অনারম্বর ভাবেই শীলা আপুর বিয়ে হয়ে যায়।
পরিবর্তন টা আসে খুব ভালো ভাবেই, বিয়ের তিন বছরের
মাথায় ছোট দুলাভাই এডমিন ক্যাডারে সুপারিশ প্রাপ্ত
হন।
বাবা কোনো কারনে আমাদের মারতেন না বা খুব একটা
ডাক ও দিতেন না।
আমরা স্বাধীন ভাবেই সবকিছু করতাম কিন্তু নামাজ না
পড়লে তার চেহারা পরিবর্তন হয়ে যেতো, প্রায়ই তিনি
বলতেন আমার যে ছেলেমেয়ে নামাজ পড়বেনা সে যেন
আমাকে বাবা না ডাকে,
অপারেশন এর আগেও বাবা ভুলেন নি নামাজের কথা
ভেবেই হাসির সাথে কান্না চলে আসলো।
সন্ধার পর পরই শীলা আপু আসলেন।
বাবার চোখমুখ উজ্জল হয়ে আছে,
শীলা আপু বাবার মুখের সামনে কান পেতে আছেন তার
চোখ থেকে পানি গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে।
হয়তো বাবা বলছেন আম্মিজান কেমন আছো তুমি,
শীলা আপু কেদে কেদে বলবে "বাবা এতটা পাগল কেন
তুমি,
আমরা সবাই খুব ভালো আছি শুধু তুমি ছারা"।
বাবা হয়তো বলবেন "মাগো আমি খুব ভালো আছিরে মা"।
বাবা খুব ঘুরাঘুরি পছন্দ করতেন,
বড় ভাইয়ার খাগড়াছরিতে পোস্টিং হওয়ার পর
গিয়েছিলেন দেখতে,
ওখান থেকে ফেরার পথে ভাইয়া আর বাবা দুইজনে ঘুরে
আসছিলেন সাজেক ভ্যালী থেকে।
ওখান থেকে ফিরে মাকে নিয়ে কতবার যে গেছিলেন
তার হিসাবে নেই।
বাবার খুব পছন্দের জায়গা সাজেক ভ্যালী।
বাবা প্রায়ই বলতেন কখনো যদি আমি হারিয়ে যাই ধরে
নিস আমি সাজেক ভ্যালীতে বসে বসে মেঘ দেখছি।
ওখানেই আমাকে খুজে পাবি।
রাত ৮.৩০ এ আমাদের সবাইকে কাছে ডাকলেন বাবা,
ফিসফিস করে আমাদেরকে বলছেন মায়ের দিকে আঙ্গুল
দিয়ে
"এ হলো শাহেদা, আমার সহধর্মিনী, তোমাদের মা।
আমি কখনই ওর সাথে খারাপ আচারন করিনি।
ওকে কখনই বকা দিয়ে কথা বলিনি,
আমি চলে যাওয়ার পর ও যদি খারাপ থাকে তাইলে আমি
কাল কেয়ামতে তোমাদের নামে নালিশ করবো আল্লাহর
কাছে"।
গল্প : বাবা
মা কাদছেন বাবার কথা শুনে।
স্থির দৃষ্টিতে বাবার দিকে তাকিয়ে আছি, বড় আপু
বাবার হাতটা ধরে বললেন "মা আমাদের কাছে জান্নাত
বাবা, তুমি মাকে নিয়ে একদম ভেবোনা"।
বাবা খুশি হয়ে উঠলেন কথাটি শুনে।
রাত ৯.০০ টার দিকে একবার জ্ঞ্যান হারিয়ে ফেললেন
বাবা।
অচেতন হওয়ার আগে ভাইয়া কোথায় জানতে চাইলেন।
আমি আবারো ফোন দিলাম কল ঢুকছেনা।
মন মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো।
রাত ১২. ৩০ মিনিট নগাদ বড় ভাইয়া ছুটতে ছুটতে আসলেন
সাথে ভাবি আর তাদের ছেলে মেয়েরা।
একদম আর্মির পোশাকেই ছুটে আসছেন,
সময়ই পাননি হয়তো চেন্জ করার।
ভাইয়া এসেই বাবার কপালে একটা চুমু খেলেন,
চোখের অশ্রুটা আর ধরে রাখতে পারেন নি বাবার
অবস্থা দেখে,
বাবার পাশে বসেই মাথাটা কোলে নিয়ে ডাকলেন
"আব্বাজান ও আব্বাজান কেমন আছোগো তুমি"?
কয়েক ফোটা চোখের পানি বাবার মুখে পড়তেই চোখটা
খুলে ফেললেন বাবা।
মায়ভরা দৃষ্টিতে বড় ভাইয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে
আছেন বাবা।
কত কথা বলার ছিলো তার বড় খোকার সাথে,
মনে হলো সেগুলো সব বলছেন।
আমি জানি বাবার যৌবনের ছাত্রজীবনে সব থেকে বড়
আনন্দ ছিলো দুটি
এক মায়ের সাথে বিয়ে
দুই বড় ভাইয়ার জন্মগ্রহন,
বাবা হয়তো বলছেন "বড় খোকা কেমন আছিসরে বেটা"
ভাইয়া হয়তো বলছে আব্বাজান আমি ভালো নাই, তুমি
যেখানে কষ্ট পাচ্ছো সেখানে আমি কি করে ভালো
থাকি বলো।
বাবা বড় ভাইয়ার কোলে মাথাটি দিয়ে রাখছেন।
এক হাতে মাকে ধরে আছেন।
শীলা আপু বাবার মুখটা বারবার মুছিয়ে দিচ্ছেন,
চুপচাপ দাড়িয়ে আছি একটু দুরে।
মহাকাল থমকে দাড়িয়ে আছে,
বাইরে রাতের আকাশে এক অদ্ভুত জোস্না ভেসে উঠেছে
যার রংটা সবুজ,
আচ্ছা জোস্নার রং সবুজ কেন হয়?
:-জানিনা জানা নেই আমার
পরিশিষ্ট :-
গল্প : বাবা
বাবাকে কবরে নামানো হলো বিকাল চারটা পয়ত্রিশে,
জানাজায় প্রচুর মানুষের সমাগম হয়েছে।
উদভ্রান্ত দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছি,
কবরে নামছেন বড় ভাইয়া, বড় দুলাভাই, মেজো দুলাভাই ও
ছোটচাচা।
বড় ভাই চিৎকার করে কাদছেন আর বলছেন
"রব্বির হাম হুমা কামা রাব্বাইয়ানি সাগিরা"
"হে আমার আল্লাহ আমার পিতামাতার প্রতি দয়া করো
যেমন ভাবে আমাকে তারা শৈশবে আাদর মায়া মমতা
দিয়ে দয়া করে ছিলো"
দৃশ্যপটে সব কিছু হারিয়ে গেলো।
আমি ছুটে চলছি সব কান্না আর অশ্রুকে পিছনে ফেলে,
সব মায়া অশ্রু এখন শুধুই ধোয়াসা লাগছে।
এক অপরুপ উপত্যকা সাজেক ভ্যলিীতে যাবো,
ওখানে কোথাও হয়তো বসে আছেন বাবা,
চুপচাপ একা একা মেঘেদের সাথে গল্প করছেন।
আমিও সেখানে যাবো অন্তহীন মহাশূন্যের মাঝে এক
নক্ষত্র বীথি হয়ে আমি খুজে বেড়াবো বাবাকে।
লেখা:-যুবায়ের মাহমুদ মুসা
গল্প : বাবা
Tag: othersdiscusionlife storyall poemsharelove storylife storywapkiz codetutorial tag codetutorial tag code
পোস্টটি কেমন লেগেছে তা জানাতে একদম ভুলবেন না !
মন্তব্য 0 টি আছে।
Need Login or Sing Up
কোন মন্তব্য নেই।