গল্পঃ "আত্মার বিদায়"
লেখক: SMsudipBD About 2020s ago |
মাঝরাতে দরজায় খটখট শব্দে রিফাতের ঘুমটা ভেঙে গেলো। কে? এত রাতে দরজায় নক করছেন কে?
-ভাইয়া আমি আপনার ছোট ভাই।
আমার কোনো ছোট ভাই নেই, ঘুমাতে দেন তো, দিনে আসিয়েন।
-ভাইয়া অনেক দূর থেকে এসেছি একটিবার আপনার সাথে দেখা করবো বলে।
-বাড়ি কোথায় আপনার?
-ভাইয়া চাঁদপুর থেকে আসছি।
-নাম কী আপনার।
-ভাইয়া "জুরা"!
-কোন জুরা? চিনতে পারলাম না তো।
-ভাইয়া দরজাটা আগে খুলো, তারপর কথা বলছি।
"রিফাত দরজা খুলে জুরা কে রুমে নিয়ে আসলো।"
রিফাত: তোমাকে চিনতে পারলাম না তো, কে তুমি, আর এত রাতে আমার কাছে কি চাও?
জুরা: ভাইয়া আমি আপনার ছোট ভাই। মনে নেই চার বছর পূর্বে ঢাকা থেকে একসাথে চাঁদপুর একই লঞ্চে করে আমরা গিয়েছিলাম। চাঁদপুর আপনার নানার বাড়ি। আমি লঞ্চের একদম সাইডে দিয়ে হাঁটতে ছিলাম, একপর্যায় পা ফসকিয়ে পড়ে যাচ্ছিলাম নিচে। লঞ্চের সাইডে রশিতে কোনো মতে এক হাতে ধরে চিল্লাছিলাম, আপনি দৌড়ে এসে আমার হাতে ধরে উপরে উঠিয়ে ছিলেন।
আমি বলেছিলাম আপনার এই উপকারের কথা জীবনেও ভুলবো না। আপনি আমাকে বলেছিলেন আপনার ছোট ভাই নেই, আমি আপনার আজ থেকে ছোট ভাই। যতটুকু সময় লঞ্চে ছিলাম আমরা আপনি আমাকে অনেক আদর করেছিলেন।
লঞ্চ চাঁদপুর ঘাটে থামার পর কেউ কাউকে আর খুঁজে পাই নি। আপনি তখন ঢাকা জগন্নাথে পড়েন। আপনি নতুন একটি মেসে উঠেছেন, আজ আপনাকে দেখার জন্য মনটা মানছে না, খুব ইচ্ছে হলো, তাই সোজা চাঁদপুর থেকে ঢাকা চলে আসলাম আপনার মেসে।
রিফাত: হ্যাঁ চিনতে পেরেছি তোমাকে। কিন্তু আমি তো ঐ মেস ছেড়ে দিয়েছি দুই বছর পূর্বে।
জুরা: ভাইয়া আপনার ঐ মেসে গিয়ে এই মেসের ঠিকানা নিয়েছি।
রিফাত: ওহ্। আমি তোমাকে ভুলে গেলোও তুমি দেখি আমাকে আজও ভুলো নি।
জুরা: ভাইয়া আমার সাথে আমাদের বাড়িতে যাবেন?
রিফাত: সময় নেই তো ভাই, সবে গ্রেজুয়েশন শেষ করলাম অনেক চাপ।
জুরা: ভাইয়া আজ রাতেই চলুন না আমাদের বাড়িতে, কাল বিকালে চলে আসিয়েন। না করতে পারবেন না ভাইয়া, আপনার ছোট ভাইটার অনুরোধ।
রিফাত: যাবো নি এক সময়, আজ না রে ভাই।
জুরা: ভাইয়া আমি বাড়িতে কথা দিয়ে এসেছি আপনাকে সকালের মধ্যেই আমাদের বাড়িতে নিয়ে যাবো, আপনার জন্য বাবা-মা অপেক্ষা করে রয়েছে। প্লিজ ভাইয়া, চলো না। এখন রওনা দিলে আমরা ভোরে গিয়ে পৌছে যাবো চাঁদপুর।
রিফাত: অনেক দিন হয়েছে নানার বাড়িতে যাওয়া হয় নি। তোর পাগলামির কাছেও হার মানতে হবে দেখি, আচ্ছা ঠিক আছে চল তাহলে এই মধ্য রাতেই জোৎস্নামন আলোতে আড্ডা দিতে দিতে চাঁদপুর যাই।
লঞ্চে এক সাথে রিফাত ও জুরার অনেক গল্প করেছে।
বাড়ির সামনে চলে এসেছে ওরা,
জুরা: ভাইয়া আপনি বাড়ির ভিতরে জান, প্রথম ঘরটাই আমাদের। আমি দোকান থেকে আপনার জন্য কিছু নিয়ে আসি, এই প্রথম আমাদের বাড়িতে আসছেন, কিছু না খাবাই কী করে।
[IMG]https://smsudipbd.design/download/dl4/da123983778f898a8d8d88914482ff7b/smsudipbd+wapkiz+mobi/biday-(smsudipbd.design).jpg[/IMG]
জুরার কথায় রিফাত একটা মুচকি হাসি দিলো।
রিফাত হাঁটতে হাটতে জুরার ঘরের কাছে গিয়ে দেখে উঠানে অনেক মানুষের ঢল। কান্নার শব্দ ভেসে আসছে পুরো উঠান জুড়ে। সবার কান্না একটি খাট কে কেন্দ্র করে।
কেউ একজন মারা গিয়েছে সম্ভবত।
রিফাত আস্তে আস্তে এগিয়ে খাটের মানুষটাকে দেখতে গেলো। চাদর টা সরিয়ে মুখ থেকে সাদা কাপড়ের ভাজ খুলে দেখে জুরা! কিছুক্ষণ আগেও তো হাতে হাত রেখে হাঁটে ছিলো জুরা! ভুল দেখেছে সম্ভবত, রিফাত এদিক ওদিক তাকিয়ে কোথায়ও জুরাকে দেখছে না।
খাটে যদি জুরা শুয়ে থাকে, তাহলে ঢাকা থেকে একসাথে কে আসলো!
কিছুক্ষণ আগেও এক সাথে হাঁটলো কে!
জুরা কী তাহলে মারা গিয়েছে!
দূর থেকে জুরার কন্ঠে এক মায়াবী শব্দ ভেসে আসছে, ভাইয়া আমি না তোমার ছোট ভাই, শেষ বিদায়ে বড় ভাইয়ের দোয়া নিবো না কী করে হয়!
.
গল্পঃ "আত্মার বিদায়"
লেখাঃ "জুরা চৌধুরি"
.
(ভুল ত্রুটি মার্জনীয়)
Tag: othersdiscusionlife storyall poemsharelove storylife storywapkiz codetutorial tag codetutorial tag code
পোস্টটি কেমন লেগেছে তা জানাতে একদম ভুলবেন না !
মন্তব্য 0 টি আছে।
Need Login or Sing Up
কোন মন্তব্য নেই।