[Life story] আজ একটি মেয়ের আত্মকথা লিখবো।
লেখক: SMsudipBD About 2020s ago |
আজ একটি মেয়ের আত্মকথা লিখবো। তবে অনুগ্রহ করে, মেয়েটির পরিচয় কেউ জানতে চাইবেন না।
পাত্র পক্ষ দেখতে এসেই হাতে আংটি পড়িয়ে দিলো!
গাঁয়ের মেয়ে আমি। বাবা সরকারি হাইস্কুলের কেরানী৷ অর্থ বিত্ত আমাদের নেই, তবে আল্লাহ দু হাত ভরে আমাদের তিন বোনকে সৌন্দর্য দান করেছিলেন। আমাদের তিন বোনকে যেই দেখতো সেই বলতো আহা!! এমন একটা মেয়েকে যদি ঘরের বৌ করতে পারতাম।
তেমনটাই হয়ে গেলো। পাত্রের মা মানে আমার শাশুড়ী মা আমাকে দেখেই একটা ডায়মন্ডের আংটি পড়িয়ে দিল। বাবার কাছে শুনলাম পাত্ররা ভয়াবহ রকমের বড়লোক। আমরা নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার। এত বড় ঘরে বাবা সম্বন্ধ করবে, আমার মন একটুও সায় দিচ্ছিলো না। কিন্তু এমন পাত্র কেউ হাত ছাড়া করতে চাইলো না। বারবার আসা যাওয়া কষ্ট বলে শাশুড়ীমায়ের অনুরোধে এনগেজমেন্টের পরেই বিকেলে কাজী ডেকে বিয়ে পড়িয়ে পরের দিন আমায় ঢাকায় নিয়ে আসলো।
আমি মফস্বলের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে অনার্স পাশ করেছি। ঢাকায় এই প্রথম আসা। যা দেখছি তাতেই মুগ্ধ হচ্ছিলাম। সত্যিই ওরা খুব ধনী। ওদের ডুপ্লেক্স বাসা। দামী কার্পেট আর আসবাসপত্রে ভরা পুরো ঘরটা। খুব সুন্দর একটা রুমে আমার ফুলসজ্জা হলো। পরের দিনই দামী একটা চায়নিজ রেস্টুরেন্টে আমার বিবাহোত্তর সংবর্ধনার আয়োজন করা হলো। গ্রাম থেকে আমার বাবা আর দুই বোন এলো। বাবার চোখ দিয়ে বারবার জল আসছিলো আমার সুখ দেখে। ফিরে যাবার সময় বাবা সবাইকে দাওয়াত দিলেন যাতে একবার তারা গ্রাম থেকে ঘুরে আসেন।
গ্রামে যাবার কথা শুনে আমার খালা আর মামী শাশুড়ী খুব এক্সাইটেড হলো। ঠিক করলো, এই শুক্রবারের পরের শুক্রবার তারা সবাই আমাদের বাড়িতে যাবে। শুনেই আমার গলাটা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেলো। কারণ এই অনুষ্ঠানে এসে বাবা জমানো টাকা দিয়ে পুরো একসেট গয়না দিয়ে গেছে। আমার কেরানি বাবার সব টাকা চলে গেছে এই দুই/তিন লাখ টাকার গয়না দিয়ে। এই অবস্হায় আমার তিন খালা শাশুড়ী, তাদের বাচ্চা, মামা শ্বশুর, চার জন ফুফু শাশুড়ী, দাদী আর নানু শাশুড়ী, দুই ননদ, তার স্বামী বাচ্চা, তিন ভাশুর- জ্যা, এক দেবর সব মিলিয়ে চল্লিশ /পঞ্চাশ জন হবে।
মাত্রই বিয়ের রিসিপশনে এত টাকার গয়না দিয়ে বাবা আমায় আশীর্বাদ করে দিলেন, এখন এত গুলো মানুষকে খাওয়ানো আর তাদের কে পোশাক দেওয়া বাবা কিভাবে সামলাবে?
আর ওদেরকে তো অনেক ভালো-মন্দ খাওয়াতে হবে। বাথরুমটাও ভালো না, ওটা ঠিক করতে হবে হাতে সময়ও নেই। বাবা কিভাবে কি করবে? বুক ফেটে কান্না আসছিলো। কিন্তু আমিই বা কি করবো? এত বড় ঘরে কে আত্মীয় করতে বলেছিলো?
আমার মন খারাপ দেখে মা তো বলেই ফেললো, বৌ মা, আর ৯/১০ দিন পড়েইতো তোমার বাড়ীতে যাচ্ছি। এতো মন খারাপ কেন?
দেখতে দেখতে বাড়ি যাওয়ার দিন চলে আসলো। চারটা মাইক্রো নিয়ে শুক্রবার ভোরে আমরা রওনা দিলাম। এসে দেখি বাড়িতে এলাহী অবস্হা। পান্ডেল টানিয়ে খাবার তৈরী হচ্ছে। সুন্দর একটা পাকা বাথরুম তোলা হয়েছে। চোখে পানি চলে আসলো, বাবা না জানি কত লোন নিয়েছে। ওদের সবাইকে বসিয়ে রান্না ঘরে গেলাম। মা, পলি আর রিনি পিঠা-পুলি বানিয়েছে। সবাইকে হরেক রকম পিঠা দিয়ে আপ্যায়ন করলাম। রাতে নানা পদ দিয়ে ডিনার করলো। খাওয়া দাওয়া শেষ করে, রাতে ফিসফিসে জিগেস করলাম, বাবা, এতো আয়োজন কিভাবে করলে?
কি বলছিস, মিলি? তুইতো পার্সেল করে টাকা পাঠায়ছিস? এই দেখ, ৬০ হাজারের ৩০ হাজার টাকা মাত্র খরচ হয়েছে। বাকিগুলো খাওয়াদাওয়া আর আর সবাইকে উপহার দেবো।
কি? পার্সেল? কই বাবা? দেখি তো পার্সেলটা।
হুম, মনে পড়ল দিন সাতেক আগে আমার শাশুড়ী মা আমার কাছ থেকে বাবার স্কুলের পুরো ঠিকানা নিয়েছিলেন। লজ্জায় আমার মাথা হেইট হয়ে গেলো। মা আমার প্রতি করুণা করছে।
সাথে সাথেই মাকে ডাক দেই। মা, একটু বাইরে আসেন কথা আছে। কিরে, মা? কি হয়েছে? কোমল কণ্ঠে মা জানতে চাইলেন।
মা, আমরা ভিক্ষুক না, আপনি আমায় এভাবে ছোট করলেন? কেন মা? গরীব বলে এতো বিব্রত করলেন?
বাকি পর্ব পরতে হলে এখানে জয়েন্ট দিন।।।।
পাগল মেয়ে, আয় বুকে আয় বলে জড়িয়ে নিলেন। শোন, মা, আমার বাবাও গরীব কৃষক ছিল রে। বড় ঘরে বিয়ে হলো, সেই বিয়েতে খাওয়া কম হলো বলে সবাই আমাকে ছি ছি করলো, যৌতুক দেয়নি বলে সবাই বললো ছোট লোকের বাচ্চা, এই যে সবাই দল বেঁধে তোমাদের বাড়ি আসছি,, এমন করে আমাদের বাড়ি আসছিলো, আমার আব্বা সাধ্যমতো খাওয়াতে পারলেও পারেনি ওদের সাধ্যমত পোশাক আশাক দিতে৷ সেই গুলো তুলে শ্বশুরঘরের সবাই আমাকে এতো কথা শুনতে হয়েছিল যা ভাবলে এখনও আমার কান্না আসে। তাইতো, তোদের খরচ কমানোর জন্য এনগেজমেন্টের দিনই বিয়ে পড়িয়ে তুলে এনেছি।
[IMG]https://smsudipbd.wapkiz.mobi/download/dl4/a4ae6dc5d3cdb57f1ae5d128fd75baf6/smsudipbd+wapkiz+mobi/-(smsudipbd.wapkiz.mobi).jpg[/IMG]
তবুও তোর বাবা রিসিপশনে এতো টাকার গয়না দিলো। আমিতো জানি কত কষ্ট হয়েছে তোর বাবার। শশুর বাড়ির ব্যাকা কথা কলিজায় সয় না রে মা।
আমি চায়নি আমার মেয়েটাও এতো কষ্ট পাক বরং সবার সামনে বুক ফুলিয়ে হাটুক। তোর বাবা আমায় তোকে উপহার দিছে, তাই তো অনেক। তোর গায়ে কোন আঁচড় লাগুক, আমি ভুলেও তা চায়নি। আর তাই তো তোর নামেই টাকা পাঠিয়েছিরে মা। যদি কোন ভুল করে থাকি, তবে আমায় ক্ষমা করিস মা, এই বুড়ো মায়ের উপর রাগ করিস না।
মা...আমায় ক্ষমা করুন। আপনার পা স্পর্শ করে পুণ্য অর্জনের সুযোগ করে দিন।
এই মায়ের প্রতি
বিনম্র শ্রদ্ধা
Tag: othersdiscusionlife storyall poemsharelove storylife storywapkiz codetutorial tag codetutorial tag code
পোস্টটি কেমন লেগেছে তা জানাতে একদম ভুলবেন না !
মন্তব্য 0 টি আছে।
Need Login or Sing Up
কোন মন্তব্য নেই।