#থ্রিলার_গল্পঃ "ভ্যাম্পায়ার দ্বীপ" #পর্বঃ ০৬
লেখক: SMsudipBD About 2020s ago |
#লেখকঃ "মোশাররফ হোসেন নীলয়"
অবন্তী একলা এক রুমে বন্দি হয়েই বুঝতে পারলো, নিশ্চয়ই ওর সাথে খারাপ কিছু করা হবে নয়তো এভাবে এরকম অবস্থায় নিয়ে আসতো না! এমতাবস্থায় নানান কিছু ভাবতেই, হুট করে দরজার লক খুলার শব্দ পেলো। মনের অজান্তে অবন্তীর মেরুদন্ডে ঠান্ডা একটা স্রোত বয়ে গেলো! অতঃপর শিরদাঁড়া সোজা করতেই দুটো হার্টবিট মিস করলো!
..
..
রুমের দরজা খুলে যেতেই অবন্তী লাফ দিয়ে বিছানা ছেড়ে ফ্লোরে দাঁড়ালো। শরীরের সমস্ত পেশি টান টান করে প্রস্তুতি নিলো। কেননা অবন্তী জানতো এরকম কিছুই একটা হবে! সেজন্য পূর্বে থেকেই ডক্টরের সহযোগিতায় অপারেশনে ব্যবহৃত ছোট সাইজের নাইফ বা ছুরি সংগ্রহ করে চুলের মধ্যে, কাটার মত করে গেঁথে রেখেছিলো। যাতে বিশেষ মুহূর্তে প্রতিপক্ষের বিশেষ অঙ্গ কেটে নিজের সেফটি আর নয়তো বিশেষ মুহূর্তে তাঁর গলার নিচে ছুরি রেখে জিম্মি বানিয়ে এখান থেকে মুক্তি পাওয়া!
রুমের ভিতর দু'জন অস্ত্রধারী প্রবেশ করলো, তবে অবন্তীর চোখ তাদের ভেদ করে আরো পিছনে দেখলো! কেননা সেখানে দাঁড়িয়ে ছিল আরো একজন সুদর্শন যুবক, সম্ভবত সেই এদলের কমান্ডার। অস্ত্রধারী দুজন একী রঙের সামরিক পোশাক পরিহিত অবস্থায় থাকলেও, যুবকটি থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট ও টি-শার্ট গায়ে জড়িয়ে ছিল! অবন্তী বুঝে নিলো, এই যুবক আজ তার বিছানায় সঙ্গী হবে!
তবে অবন্তীর ধারণাকে ভুল প্রমাণ করে যুবকটি বলে উঠলো,
-- হ্যালো ম্যাম, আমি এখানকার কমান্ডিং অফিসার রিতেশ এবং আপনাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য দুঃখিত। আজ থেকে আপনি আমাদের বিশেষ মেহমান।
[অতঃপর পাশে দাঁড়ানো দুজন অস্ত্রধারীকে হাতের ইশারায় দেখিয়া বললো] আপনি তাদের সাথে সমুদ্রতীরে যান এবং সেখানে বিশেষ একটি জলযান/সাবমেরিন আপনার জন্য অপেক্ষা করছে। আপনার ভ্রমণ আনন্দদায়ক হোক।
যুবক বা কমান্ডিং অফিসার রিতেশ এর কথা শুনে অবন্তীর চোখ চিক করে উঠলো। সম্ভবত ওই এখান থেকে মুক্তির একটা পথ দেখতে পেল। এত সহজে ওকে ছেড়ে দেয়া হলো, এটা যেনো অমাবস্যায় পূর্ণিমার চাঁদ। আবার ওকে বিশেষ জলযান দিচ্ছে, ওর নিজস্ব দ্বীপে পৌঁছানোর জন্য। ইচ্ছে করছে খুশিতে লাফানোর জন্য, আর এতই খুশি ছিল যে নীলয়ের কথা দিব্যি ভুলে গিয়েছিলো।
অতঃপর অস্ত্রধারী দুজন অবন্তীকে নিয়ে আন্ডারগ্রাউন্ডের উপরে চলে আসে। উপরে পৌঁছেই সিগন্যাল সেটের মাধ্যমে কয়েক জায়গায় যোগাযোগ করলো। তারপরে রোড ক্লিয়ারেন্স নিয়ে অবন্তীকে সামনে রেখে সমুদ্রের দিকে হাঁটতে থাকে।
কিছুদূর যাওয়ার পর অবন্তীর ধারণা পাল্টে গেলো। সত্যিকার অর্থে অবন্তীকে মুক্তি দেওয়া হচ্ছে না বরং সারা জীবনের জন্য বন্দি করা হচ্ছে! অবন্তী মনের খুশিতে উড়তে উড়তে হাঁটতে ছিল আর ওর পেছনে অস্ত্রধারী দুজন নিজেদের মধ্যে গল্পে মশগুল ছিল! তাদের গল্প থেকেই অবন্তী জানতে পারলো--
"এই আন্ডারগ্রাউন্ড সহ অন্যান্য সব কিছু গোপন ক্যামেরার মাধ্যমে অবজারভেশন করা হয়, হেড অফিস থেকে! তাছাড়াও এখানকার যাবতীয় কার্যক্রম ও দিকনির্দেশনা সেখান থেকেই দিয়ে থাকে। অবন্তী যখন হসপিটাল থেকে ছাড় নিয়ে ওয়েস্টার্ন ড্রেস পরে বের হয়, তখন সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে ওদের বিগবস অবন্তীর রুপ যৌবন ও সুঠাম দেহ দেখেই তাঁর চেতনা দন্ড গরম হয়ে গেছে! এখন সে অবন্তীকে একান্তভাবে কাছে পেতে চাইছে। সেজন্য অবন্তীকে তার কাছে পাঠানো হচ্ছে! অবশ্য বিগবস কোথায় থাকে বা অবন্তীকে এখন কোথায় পাঠানো হবে, সে ব্যাপারে তাঁরা কোনো আলোচনা করেনি!"
তাদের কথা শুনে অবন্তীর হাঁটার গতি কমে যায় নিজেকে খুব অসহায় লাগে। এতক্ষণে নীলয়ের কথা মনে পড়ে যায়। এই জীবনে হয়তো আর নীলয়ের সাথে দেখা হবে না। তাছাড়া অবন্তীর প্রিন্স বা নীলয় কোথায় আছে কি অবস্থায় আছে, একদম জানা নেই! বিশেষ করে ওই তো অবন্তীকে ছাড়া অসহায়! ঠিক তখনই বুকের মধ্যে একটা শূন্যতা অনুভব করে। আর ওর ইচ্ছে করছিল, অস্ত্রধারী দুজনকে হত্যা করে এখান থেকে পালিয়ে যাবে। তবে পেছন ফিরে তাকাতেই সব ইচ্ছে ফুটো হওয়া বেলুনের মতো চুপসে যায়। ছয় ফিট লম্বা দুজন অস্ত্রধারীর সামনে থেকে পালিয়ে যাওয়ার প্ল্যান করা আর একাকী আটলান্টিক মহাসাগর হেঁটে পার হওয়া সমান কথা।
অতঃপর অবন্তী হাঁটতে হাঁটতে মনে মনে সংকল্প করলো যে,
"যে কোন কিছুর বিনিময়ে হলেও ওকে পালাতেই হবে। আর যেকরে হোক সেটা সমুদ্রতীরে পৌঁছানোর আগেই পালাতে হবে! কেননা তাদের জলযানে একবার ঢুকে গেলে আর বের হওয়ার কোন সুযোগ থাকবে না। সেজন্য অবন্তী পালানোর সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে নিলো, তবে কিভাবে সেটা সম্ভব এই মুহূর্তে ভাবতে পারছেনা! আর একবার পালিয়ে যেতে পারলে, পুনরায় নীলয়কেও উদ্ধার করার প্ল্যান করতে হবে!"
..
..
..
ওদিকে নীলয় সহ আরো দশ বারো জন মাটি ও বালির ধ্বসে চাপা পড়ে যায়, তখন রাত আনুমানিক মধ্যপ্রহর। ওদেরকে উদ্ধার বা অন্য কোন কার্যক্রম করার জন্য আন্ডারগ্রাউন্ডের অস্ত্রধারীদের মধ্যে কোনরকম তৎপরতা ছিল না। ওদের কাছে জীবনের কোন মূল্য ছিলনা, বিশেষ করে শ্রমিকদের! কেননা শ্রমিকদের জন্য কোন মজুরি দিতে হতো না, শুধু ধরে ধরে নিয়ে আসতো।
তাছাড়াও প্রতিটি কনস্ট্রাকশন সাইটে নির্দিষ্ট মাত্রায় শ্রমিক ভাগ করা ছিল। এ কাজগুলোকে দ্রুত করার নির্দেশ দেওয়া ছিল উপরমহল থেকে। হয়তোবা পরবর্তীতে আরো বড় কোন প্রজেক্ট বা ড্রিম পূরণ করবে। সেইজন্য শ্রমিকদের কাজ বিরতিহীন চললো আর ওদিকে কাউকে উদ্ধার কাজে পাঠানো হলো না।
তবে ভূমিধ্বস বা চাপা পড়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে শ্রমিকদের মাঝে একটা চাপা উত্তেজনা দেখা দেয়। এক দুজন করে, রাতারাতি সবাই জেনে গেল! "কে বা কারা বালি চাপা পড়েছে?"
এমনকী রাতের বিশ্রাম বা ঘুমন্ত পার্টিও ভূমিধ্বসের খবর পেয়ে যায়। তবে তারাও ততটা আগ্রহ দেখালো না। হয়তোবা সারাদিনের পরিশ্রম ওদেরকে কাবু করে নিয়েছিল, নয়তোবা মৃত্যুই তাদের কাছে মঙ্গল বা উত্তম ছিল এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তির পথ হিসেবে।
এছাড়াও এখানে যারা বন্দি অবস্থায় ছিল বা যাদেরকে বন্দি করে এনেছিল, তাদের অধিকাংশই ভিন্ন ভিন্ন পরিবার থেকে এসেছে। কারো সাথে কারো তেমন পরিচিতি ছিল না। সারাদিন রাত এত এত পরিশ্রম করতে হতো যে, কেউ কারো সাথে কথা বলার সুযোগ ছিল না। এজন্য হয়তোবা তাদের মধ্যে বন্ধন অতটা মজবুত ছিলনা। তবে বলে রাখা উচিত, বন্দিদের সবাই ছিল মুসলিম।
..
..
..
"নিঃস্বার্থভাবে অন্যের জন্য কিছু করলে, সেটা কখনো বিফলে যায়না"
এই কথাটার সত্যতা আবারো মিললো। তাইতো নীলয় ভূমিধ্বসে চাপা পড়েছে এই খবরে সেই বয়স্ক মানুষটি, যাকে নীলয় পাথর ভাঙ্গা কাজে সাহায্য করেছিল; ওই সবার আগে দৌড়ে চলে আসে সাহায্য করতে। সে একাকী উদ্ধার করার জন্য বের হয়ে পড়লো, যদিও তাঁর পক্ষে এটা ছিল নিতান্তই দুঃসাহসিকতা ও অসম্ভব কাজ। তবে হ্যাঁ একজনের উদ্যোগে যেনো দশজন অনুপ্রাণিত হলো। এভাবে ধীরে ধীরে অধিকাংশ শ্রমিক এসে উদ্ধার কাজে হাত লাগালো। পাক্কা দু'ঘণ্টা পরিশ্রমের পর সবাইকে উদ্ধার করা গেলো।
তবে আফসোস, উদ্ধার করেও কোনো লাভ হলো না। কেননা এভাবে দু'ঘণ্টা মাটি চাপা দিয়ে পড়ে থাকাতে শ্বাস প্রণালী অকেজো বা বন্ধ হয়ে সবারই মৃত্যু হয়েছে। এমনকী দূঃসাহসিক এজেন্ট নিলয়েরও। এই অবস্থায় সবাই বিলাপ করল যে, শুরুতেই গড়িমসি না করে সবাই একসাথে এগিয়ে আসলে হয়তোবা দু-একজনকে জীবিত উদ্ধার করা যেত!
অতঃপর আন্ডারগ্রাউন্ডের অস্ত্রধারীরা শ্রমিকদের নির্দেশ দিলো, লাশগুলো নিয়ে দ্বীপের মধ্যে বালি চাপা দিয়ে রাখার জন্য। তারপর সবাই অশ্রুসিক্ত হয়ে ধরাধরি করে লাশগুলো আন্ডারগ্রাউন্ড থেকে বের করে উপরের খোলা বালিতে নিয়ে গেল। তবে আন্ডারগ্রাউন্ড পয়েন্ট থেকে এক কিলো দূরে, যাতে কোনরকম ল্যান্ডমার্ক বা ভূমির চিহ্ন না থাকে আর যেটার মাধ্যমে কেউ এসে আন্ডারগ্রাউন্ডের বা গোপন আস্তানার সন্ধান পায়।
...
...
...
লাশগুলো একসারিতে শুয়ে রেখে কিছুটা দূরত্বে কবর খুঁড়তে ব্যস্ত শ্রমিকরা। যখন 12 জনের জন্য বারোটি কবর কমপ্লিট করা হলো, তখন সবাই মিলে লাশ গুলো একে একে দাফন দিতে থাকলো। অতঃপর 11 টি লাশ কবর দেওয়ার পর যখন 12 নাম্বার লাশ কবরে নামাবে তখন সবাই যেনো স্তব্ধ নির্বাক হয়ে গেল। কারণ 12 নাম্বার লাশটি উধাও, যে লাইনে লাশ রেখেছিল তার আশেপাশে কোথাও কোন লাশ নেই।
তখন রাত দ্বিপ্রহর পেরিয়ে গেছে, চারিদিক নিস্তব্ধ নীরবতা। অজানা ভয়ে সবার গায়ের লোম কাটা দিয়ে উঠলো। ওরা দৌড়ে অস্ত্রধারীর কাছে গেলো, যারা ওদের নিকট থেকে অল্প কিছু দূরে দাঁড়িয়ে সবাইকে পাহারা দিচ্ছিল।
ওদের ব্যাখ্যা শুনে অস্ত্রধারী সবাই হেসে দিলো। লাশ কখনো উদাও হয় নাকি? তারপরে কবরের কাছে এসে বাস্তবতার সম্মুখীন হলো। কবর গণনা করে দেখলো একটি তখনও ফাঁকা। অস্ত্রধারীরা ভেবেছিল, একী কবরে ভুল করে সম্ভবত দুটো লাশ দাফন করে ফেলেছে, তাই শ্রমিকদের দ্বারা সবগুলো কবর থেকে লাশ বের করা হলো! কিন্তু না, এতেও কোন লাভ হলো না। কেননা প্রতিটি কবরে একটি একটি করেই লাশ দাফন করা হয়েছিল।
এতক্ষণে সশস্ত্র সিকিউরিটির মনেও ভয় ও আতঙ্ক গ্রাস করে ফেললো। তাহলে লাশ কি হাওয়া হয়ে গেল অথবা শয়তান, ভূত বা প্রেতাত্মা। অস্ত্রধারীরা সবাই ছিল মূর্তিপূজারী এবং অশরীরী আত্মাতে বিশ্বাসী। তারা বিশ্বাস করতো, আত্মার কোন মৃত্যু হয় না বরং এক রূপ থেকে আরেক রূপে রূপান্তরিত হয়! এমতাবস্তায় ওরা অশুভ সংকেত বা খারাপ কিছু হতে চলছে এই ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে যায় এবং আন্ডারগ্রাউন্ড কমান্ডিং অফিসে সেটের মাধ্যমে রিপোর্ট করলো। তখন কমান্ড অফিস থেকে আরো সশস্ত্র বাহিনী পাঠানো হলো।
এই মূহুর্তে দ্বীপের উপরে 20 থেকে 25 জন অস্ত্রধারী, গায়েব হওয়া লাশ খুঁজে বেড়াচ্ছে। গাড়ো অন্ধকার চারিদিকে নিস্তব্ধতা, যেন প্রতিটা পদক্ষেপে ভূমিকম্পের মতো শব্দ করছে। দুজনের গ্রুপ করে চারদিকে খুঁজতে থাকলো সবাই। হুতুম পেঁচা বা রাতের পাখির ডানা ঝাপটানোতেই তাদের ভয় ও আতঙ্কে হার্টবিট বন্ধ হবার উপক্রম হয়ে যাচ্ছিল।
তাইতো তাঁরা হাতে হাত রেখে একজন আরেকজনকে চোখে চোখে রাখছিল, লাশ খোঁজা নয় যেন নিজেদেরকে রক্ষা করছিলো লাশের কাছ থেকে বাঁচার জন্য।
তবে এভাবে ঘন্টাখানেক খুঁজেও সবাই ব্যর্থ হয়ে গেলো, কেননা দ্বীপের উপর এমনকি সমুদ্র কিনারা বা অন্য কোথাও লাশ তো দূরের কথা, জীবন্ত কোন মানুষ খুঁজে পাওয়া পেলো না।
..
..
..
অবন্তীকে নিয়ে সমুদ্র উপকূলের দিকে যাওয়া সিকিউরিটি দ্বয়ের কাছেও লাশ গায়েব হওয়ার খবর এসে পৌঁছায়। একেতো ওরা সংখ্যায় ছিল দুজন, তাই ভয় ও আতঙ্কটাও ছিল ডাবল। হাঁটছে আর ভাবছে এই বুঝি সামনে লাশ চলে আসবে। যখন সমুদ্রের কাছাকাছি এসে পৌঁছালো তখন যেন আরো বেশি শঙ্কা ও সন্দেহ ওদেরকে গ্রাস করে নিলো। কেননা হাফ কিলো দূরে থেকেও ওরা সমুদ্রের গর্জন শুনতে পাচ্ছিল, আর সেটা মনে হচ্ছিল কোন দানবীয় লাশ ওদেরকে ডাকছে!
যতই সামনে এগোচ্ছিলো, ততই সমুদ্রের গর্জন আরো ভয়ঙ্কর লাগছে। যদিও রাতের নিস্তব্ধতায় ইহা আরো অধিক ভীতিকর মনে হচ্ছিল। এমন শীতের রাতেও অস্ত্রধারী দুজন ঘামে নেয়ে গেলো, এতটাই ত্রাস অনুভব করল। একে অপরের বুকের ধুক ধুক শব্দ শুনতে পাচ্ছিল আর যেকোনো সময় প্রাণ পাখি যেন খাঁচা ছেড়ে ওরাল দিবে।
অতঃপর পানির উপর জলযান টির হালকা আলো নিয়ে নড়াচড়া লক্ষ্য করলো ওরা। এই যানটি এরপূর্বেও দেখেছিল অবন্তী ও নীলয়। আলো সহ জলযান দেখে যেনো অস্ত্রধারীদের প্রাণ ফিরে পেলো, তাই ওদের গতি বাড়িয়ে দিলো সাথে অবন্তীরও।
অস্ত্রধারী দুজন ছিল পেছনে আর সামনে ছিল অবন্তী। তখন ওদের দৃষ্টি ছিল সামনে আর চিন্তা ছিল কখন পৌঁছাবে? ঠিক সেই সময় অস্ত্রধারী দুজন তাদের শরীরে বিদ্যুৎ শক অনুভব করলো। হুট করেই ওদের পা বালির সাথে আটকে গেলো, সামনে বাড়ানোর মতো কোনো শক্তি পেল না। এ যেনো কোন মন্ত্রমুগ্ধ ওদেরকে মুগ্ধ করেছে। তারপর কাটা কলাগাছের মতোই, ওরা দুজন বালির উপর দুমড়ে-মুচড়ে পড়ে গেলো।
একদিকে সমুদ্রের উপরে ভাসতে ছিল জল যানটি আর মাঝে খোলা আকাশের নিচে দুটো বডি পড়ে থাকল, যা কিছুক্ষণ আগেই ধরাশায়ী হয়েছে। ওদিকে একটি লাশ মিসিং। সমস্ত শ্রমিকের মাঝে ভয়, শঙ্কা ও গুঞ্জন ছিল কখন কি হয়ে যায়? তাঁরা ভেবে নিলো, এই দ্বীপের উপর খারাপ জ্বীন, না হয় লাশ খাওয়া শয়তান ভর করেছে।
অন্যান্য অস্ত্রধারীরা কিছুটা শঙ্কিত অবস্থায় আন্ডারগ্রাউন্ডে লুকিয়ে গেলো। হবে হ্যাঁ গুহার মুখে আগের মতই ৪ জন ডিউটিরত অবস্থায় থাকল। এই 8 জন, ৪ টি টাওয়ারের উপর সবসময়ই চতুর্মুখী পজিশন নিয়ে ডিউটি করে। যাদের অবস্থান আন্ডারগ্রাউন্ড এর মুখ থেকে চল্লিশ ফুট দূরে দূরে।
..
..
..
সময় পেরিয়ে যাচ্ছে কিন্তু মেয়ে বা অবন্তীকে নিয়ে কেউই জলযানের কাছে পৌঁছাচ্ছে না। তখন জলযানের অপারেটর, আন্ডারগ্রাউন্ডের কমান্ড ভয়েস রুমের সাথে যোগাযোগ করলো। ওখান থেকে জানানো হলো আরো দুই ঘন্টা আগে দুজন সিকিউরিটি দিয়ে অবন্তীকে পাঠানো হয়েছে। তখন কমান্ড অফিসার ভেবে নিলো, হয়তোবা সুন্দরী অবন্তীকে পেয়ে সিকিউরিটি দুজন নিশি-রতিতে মেতে উঠেছে। এজন্য সে খুবই রাগান্বিত হয়ে সাথে সাথেই 10 জনের একটা সিকিউরিটি টিম পাঠিয়ে দিলো, এটার উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য।
তবে ইতিমধ্যে লাশ হারানোর খবরটি সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। এজন্য সিকিউরিটি টিম কিছুটা সংখ্যা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে করছিল। পরে হাইকমান্ড অথরিটি থেকে প্রেসার ক্রিয়েট করাতে তাঁরা মুভ করল, তবে ভিতরে ভয় ভীতি উদ্বেগের সীমা থাকলো না!
..
..
..
সমুদ্র তীর থেকে আন্ডারগ্রাউন্ডের দূরত্ব 5 কিলো। সাড়ে 4 কিলো আসার পর সিকিউরিটি টিম দুজনকে বালির উপর চিৎ হয়ে শুয়ে থাকতে দেখলো। অতঃপর দৌড়ে তাদের কাছে পৌঁছালো। যখন লাইটের আলো তাদের মুখের উপর পড়লো, তখন তাঁরা সবাই ভয়ে আত্মচিৎকার দিয়ে উঠলো।
কেননা ওরা দুজন চিৎ হয়ে শুয়ে ছিল আর ওদের দুজনের গলাতে ভ্যাম্পায়ারের দন্ত চিহ্ন স্পষ্ট। হয়তো কিছুক্ষণ আগেও তাজা রক্ত গড়িয়ে পড়েছিল, তবে এখন রক্ত শুকিয়ে গেলেও তার রেখা বিদ্যমান। খুবই ভয়ানক ও লোমহর্ষক পরিস্থিতি! আশ্চর্য ব্যাপার ছিল মেয়েটির কোন অস্তিত্ব ছিলনা। আশেপাশে কোথাও খুঁজে পেল না। দ্রুত ওরা জলযানের কাছে পৌঁছায় কিন্তু সেখানেও কেউ পৌঁছায়নি। এমনকী তাদের জিজ্ঞাসা করলে উত্তর দেয়, তাঁরা কোন রকম শব্দ পায়নি।
অতঃপর 10 জন সিকিউরিটির টিম কমান্ডার সেটের মাধ্যমে আন্ডারগ্রাউন্ডের ভয়েস রুমে সিগন্যাল পাঠালো। এই তথ্য শোনা মাত্র পুরো আন্ডারগ্রাউন্ড কেঁপে উঠলো। এরকম পরপর তিনটা সংবাদ--
এক নাম্বার ভূমিধ্বস, দুই- লাশ গায়েব আর তৃতীয় ভ্যাম্পায়ার আঘাতে দুই সিকিউরিটির মৃত্যু।
অবশেষে কমান্ড অফিসার আন্তর্জাতিক লেভেলের গোপনীয় যন্ত্রের মাধ্যমে তাদের হেড অফিসে খবর পাঠালো।
এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য হেড অফিস পুরো স্তব্ধ। যেখানে ওরাই ভ্যাম্পায়ার গেম খেলে ছিল, অথচ আজ উল্টো ওরা আবার সেই ভ্যাম্পায়ার দ্বারা আক্রান্ত হলো। এটা কিভাবে সম্ভব? তাহলে কি সত্যি সত্যি এই দ্বীপে ভ্যাম্পায়ার আছে? হাইকমান্ড থেকে দ্রুত আদেশ দিল লাশের ময়না তদন্ত করার জন্য!
তাছাড়াও বাংলাদেশের বাহিরে অবস্থানরত হাই কমান্ড অফিসে একটা কনফারেন্স আয়োজন করা হলো। সেখানে সেন্টমার্টিন দ্বীপের সবকিছু নিয়ে আলোচনা সমালোচনা করা হলো। অবশেষে এই দ্বীপকে ঘিরে অন গ্রাউন্ডে বিশ্লেষণ ও পর্যবেক্ষণ করার জন্য একটা স্পেশাল টিম দ্বীপে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো!
..
..
..
ভ্যাম্পায়ার দ্বারা মৃত দুই অস্ত্রধারী সিকিউরিটি গার্ডের পোষ্টমর্ডেম রিপোর্ট বেরিয়ে আসলো। সেখান থেকে জানা গেল তাদের অস্বাভাবিক মৃত্যুর রহস্য। তাঁরা দুজনেই নার্ভ সিস্টেম বন্ধ হয়ে মারা গেছে। গলাতে দাঁতের সুস্পষ্ট চিহ্ন ও রক্ত থেকে কোনরকম স্যাম্পল পাওয়া যায়নি। এছাড়াও নার্ভ সিস্টেম বা স্নায়ু কেন বন্ধ হয়েছে, সেটাও ডক্টর টিম ফাইন্ড আউট করতে পারলো না। তাছাড়া বডিতে অতিরিক্ত ছাপ রেখে যায়নি খুনিরা। হয়তোবা আদৌ তাদের শরীরে কেউ ছুঁয়েছে কিনা সেটাও প্রশ্নবিদ্ধ।
এই মুহূর্তে আন্ডারগ্রাউন্ডের ডক্টর টিম তাদের প্রিয় একজন ডক্টরকে খুব মিস করলো, যে এই মুহূর্তে একটা স্পেশাল অপারেশনে বাংলাদেশের একটি হসপিটালে বিশেষ দায়িত্বে নিয়োজিত আছে! সে থাকলে হয়তোবা কোন একটা ক্লু নিশ্চিত পেয়ে যেত বডি থেকে।
অনেকগুলো প্রশ্নের মুখোমুখি অস্ত্রধারী টিমের কমান্ড অফিসার। তাঁর ভাবনাতে, মৃত দুই সিকিউরিটি ভ্যাম্পায়ার দ্বারা আক্রান্ত কিনা সেটা নিয়েও দ্বিধা দ্বন্দ্বে! কেননা যেখানে দুটো ছেলেকে মেরে ফেলেছে অথচ মেয়েটির কোন হদিস নেই! তাহলে কি এই ভ্যাম্পায়ার প্রেমিক টাইপের এবং সুন্দরী মেয়ের প্রেমে পড়ে। অবন্তীর প্রেমে পড়ে তাকে কিছু করেনি। আবার এমনও হতে পারে, অবন্তীকে ভ্যাম্পায়ারের পাখার সাহায্যে উড়িয়া অন্য কোন দ্বীপে রেখে এসেছে আর যেই দ্বীপে শুধু ভ্যাম্পায়ার বাস করে। তাহলে কোথায় সেই দ্বীপ? ভ্যাম্পায়ার এখন কোথায় আছে অথবা মেয়েটিকেইবা কোথায় রেখে এসেছে!?
..
..
..
পরের দিন দ্বীপের মধ্যে কোন আগন্তুক বা অন্য কিছু আছে কিনা, এটা খুঁজে দেখার সাহস হয়ে ওঠেনি তাদের কারো! এমনিতেই তাঁরা এই দ্বীপে ছিল অবৈধ বাসি! যেকোনো সময় বাংলাদেশের কারো চোখে তাদের উপস্থিতিতে টের পেয়ে যেতে পারে। তাছাড়া বাংলাদেশ থেকে এই দ্বীপটির উপর নজর রাখছে এটাই স্বাভাবিক। যেকোন সময় সরকারিভাবে হামলা চালাতে পারে, অবশ্য সেটার জন্য স্পেশাল ব্যবস্থা নিয়ে রেখেছে এই অস্ত্রধারী বাহিনী। বিশেষ করে কেউ নদীপথে অ্যাটাক করার জন্য এই দ্বীপে আসলে, তাদেরকে পানিপথেই ইলেকট্রিক শকের মাধ্যমে মারা হবে সেই আল্ট্রা সিস্টেম করে রাখা আছে।
অবশ্য ইতিমধ্যে বাংলাদেশ থেকে নৌ পরিদপ্তরের দুটো কমান্ডো বোট বা নৌকাকে ইলেকট্রিক শক দিয়ে এক্সিডেন্ট করানো হয়েছে। ইহাতে বাংলাদেশ কিছুটা ঘাবড়ে গিয়েছে আর ভেবেছে ভ্যাম্পায়ারের দ্বীপ সত্যি বিপদজনক এবং পুরো নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।
হয়তো তারা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে কিন্তু গোপনীয় ভাবে ঠিকই অবজারভেশন করছে, এটা বুঝতে পারছে এখানকার আন্ডারগ্রাউন্ডের অস্ত্রধারী বাহিনী ও তাদের হাইকমান্ড।
বাংলাদেশ একটি শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর দেশ, এটা ইতিমধ্যে এই অস্ত্রধারী বাহিনী প্রমাণ পেয়েছে। কেননা এই দ্বীপ দখলের পূর্বে কয়েকবার সাবমেরিন পাঠাতে যেয়েও ব্যর্থ হয়েছে, অস্ত্রধারী বাহিনী সরকার। শত শত নেটওয়ার্ক জ্যামার বসিয়েও কাজ হয়নি, ওদের সাবমেরিন বারবার বাংলাদেশ নৌবাহিনী রাডারে ধরা পড়েছে!
অতঃপর বাংলাদেশের রাজনৈতিক...
একটুকু ভাবতেই আন্ডারগ্রাউন্ড কমান্ডিং অফিসার রিতেশের সিগন্যাল সেট বেজে উঠলো, রিসিভ করতেই কিছু দিকনির্দেশনা দেয়া হল তাঁকে। তার মধ্যে একটা ছিল, কোন অবস্থাতেই যেনো দিনের বেলাতে দ্বীপের মধ্যে কোন কার্যক্রম না চালানো হয়।
..
..
এজন্য আজ রাতে স্পেশাল টিমসহ অন্যান্যরা মিলে দ্বীপের সম্ভাব্য সন্দেহজনক পয়েন্ট গুলো খুঁজে দেখতে লাগলো। বিশেষ করে নদীপথ জেটি বা হোটেল রিসোর্ট গুলো। কিন্তু কাউকেই পেলো না বা সন্দেহজনক কিছু চোখে পড়লো না।
তবে আশ্চর্যজনক ছিলো এটা যে, আজও অস্ত্রধারীর সদস্যের তিনজন ভ্যাম্পায়ার দ্বারা আক্রান্তের শিকার হয়ে মারা গেছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্টে একই ফলাফল, স্নায়ুতন্ত্র বন্ধ হয়ে মারা গেছে। ইহাতে দ্বীপের অস্ত্রধারী সহ হেড অফিসের উপর ঝড় বয়ে গেল। এবার হাইকমান্ড বা অথরিটির মাথা নষ্ট হবার উপক্রম! ওই বাংলাদেশের বাইরে থেকেও বুঝতে পারলো, ওখানে কিছু একটা গন্ডগোল চলছে। হয়তোবা তাদের বানানো ভ্যাম্পায়ার গেমকে, অন্য কেউ রিভেঞ্জ খেলছে। সেজন্য হাই কমান্ড সিদ্ধান্ত নিলো, বাংলাদেশের এই দ্বীপে পৌঁছে উক্ত ঘটনাকে তদন্ত করবে বা ফেইস করবে! কেননা এত বড় খিলাড়ির সাথে অন্য কাউকে খেলতে দিতে চাইছে না উনি।
..
..
..
অপরদিকে এসপি মেহরাব ভ্যাম্পায়ার দ্বীপের কেসটি মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে পারেনি। যদিও সরকারি ভাবে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছিল না। তাছাড়া গত 15 দিন বিভিন্ন ঘটনার উপর ভিত্তি করে সরকারিভাবে এই কেস শিথিল করেছে। কেননা যতবার পদক্ষেপ নিয়েছে, ততোবারই কেউ-না-কেউ নিহত বা গুরুতর আহত হয়েছে।
যদি ইহা কোন সাধারণ ক্রাইম চক্র বা গ্যাঙ লিডারের কাজ হতো, তবে ফোর্সের মাধ্যমে সমাধান করা যেতো! কিন্তু এখানে শয়তান, প্রেতাত্মা, অপশক্তি বা এলিয়েনের অশরীরীর হাত আছে, তাই তাদের সাথে সাধারণ মানুষ কখনো পেরে উঠছে না।
এটা অলরেডি বাংলাদেশ সরকার বুঝে গেছে, সেজন্য সেন্ট মার্টিন দ্বীপের চিন্তা ভাবনা ছেড়ে দিয়েছে। এমনকী অলরেডি এই দ্বীপের বাসিন্দাদের স্থানান্তর করে ফেলছে এবং তাদের জন্য আবাসন তৈরির প্ল্যানিং করা হয়েছে, নোয়াখালীর সুবর্ণ ও ভোলার জাহাজের চরে!
এমতাবস্থায়, এতদিন পর ভ্যাম্পায়ার কেসটার নতুন একটা অধ্যায় সামনে আসলো। কেননা আজ ভোর রাতে এসপি মেহরাবের মোবাইলে আননোন নাম্বার থেকে কল আসে এবং জানানো হয়--
''টেকনাফ সদর হসপিটাল ও মডেল থানাতে লুকিয়ে আছে আপনার কেস এর মূল রহস্য!"
..
..
..
#চলবেই [সম্ভবত পরের পর্বেই শেষ]
👉👉#প্রশ্নঃ👈👈
১! লাশ বা অবন্তীর গায়েব হওয়া সম্পর্কে বলুন?
২। সত্যি সত্যি কী এই দ্বীপে ভ্যাম্পায়ার এসেছে?
অনুরোধ থাকলো, কনটেস্টে সবাই পার্টিসিপেট করবেন। হয়তোবা 100% সঠিক উত্তর কেউই পারবেনা কিন্তু এটা আপনার অনুমান শক্তিকে জাগ্রত ঠিকই করবে!
আর এরকম প্রশ্ন উত্তর পর্বে দুটো সুবিধে হয়ঃ--
১। গল্প গভীর ভাবে পড়া হয়।
২। পাঠক ও লেখকের মধ্যে সম্পর্কটা সুদৃঢ় ও ভালোবাসায় সিক্ত হয়।
#ধন্যবাদ।
Tag: othersdiscusionlife storyall poemsharelove storylife storywapkiz codetutorial tag codetutorial tag code
পোস্টটি কেমন লেগেছে তা জানাতে একদম ভুলবেন না !
মন্তব্য 0 টি আছে।
Need Login or Sing Up
কোন মন্তব্য নেই।