#থ্রিলার_গল্পঃ "ভ্যাম্পায়ার দ্বীপ" #পর্বঃ ০১
লেখক: SMsudipBD About 2020s ago |
#লেখকঃ "মোশাররফ হোসেন নীলয়"
মেয়ে দুটি পাশাপাশি চিৎ হয়ে শুয়ে আছে, সমুদ্রতীরে বালিকণার উপর। শীতের সকালের হিমেল বাতাসে তাদের চুলগুলো হালকা উড়ে এসে কখনো চোখ মুখ ঢেকে দিচ্ছিল আবার কখনো পুরোটা উদোম করছিল। এছাড়াও ঊষার আলো, রক্তিম আভা হয়ে চারদিকে দ্যুতি ছড়াচ্ছিল আর সেই আলোতেই মেয়ে দুটিকে আরো মিষ্টি ও সুন্দর লাগছিল।
..
..
..
অপরদিকে একী দিনে জেলে রবিউল এবং তাঁর সঙ্গী মাহমুদ ও মিজান সারারাত সাগরে মাছ শিকার করে। তারপর কাকভোরে ক্লান্ত শরীর ও ঘুমন্ত চোখে ডিঙি নৌকা নিয়ে পাড়ের দিকে আসতে ছিল। অবশ্য জেলে রবিউলের বাকি দুই সঙ্গী নৌকার মধ্যে পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছিল। হয়তোবা সারারাতের ক্লান্তি ওই দুজনকে গ্রাস করে নিয়েছিল!
যখন ওদের ডিঙ্গি নৌকা সমুদ্র তীরের কাছাকাছি পৌঁছায়, তখন রবিউল এই মেয়ে দুটির এই অবস্থা দেখে কিছুটা ভিমরি খেয়ে যায়! তখন ওই মনে করে, হয়তোবা দুঃস্বপ্ন বা কল্পনা দেখছে। কেননা এই মাঘ-ফাল্গুনের কনকনে শীতের সকালে, কোন মনুষ্য জাতিই এমন নির্জন ও নিরিবিলি সমুদ্রতীরে শুয়ে থাকবে না।
অতঃপর চোখ কচলে ভালোভাবে তাকিয়ে নিশ্চিত হয়, হ্যাঁ ঘটনা সত্যি। তাহলে কি দুর্ঘটনা বা অন্য কিছু? মনের মধ্যে এই প্রশ্নটি উদয় হতেই, অপর 2 ঘুমন্ত মাঝিকে তাড়া দিয়ে ডেকে তুলে। বাকি দুই জেলে মিজান ও মাহমুদের কাঁচা ঘুম ভাঙ্গাতে, হুড়মুড়িয়ে বসে যায়। ওদের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছিল বাড়িতে ডাকাত পড়েছে, এরকম একটা ভাব নিয়ে ঘুম থেকে উঠে।
ততক্ষণে ওদের নৌকা প্রায় পাড়ে ভিড়ে গেছে। রবিউল মাঝির দেখানো টার্গেটে বাকি দুজনের চোখ আটকে আছে। হ্যাঁ সত্যিই তো, দুটি সুন্দরী মেয়ে চিৎ হয়ে নির্বিকার অবস্থায় পড়ে আছে সমুদ্রতীরে বালিকণার উপর। শরীরের পোশাক আষাক দেখে শহরের অভিজাত পরিবারের মনে হচ্ছে। চারিদিকে ভালো করে লক্ষ্য করে, কিন্তু কাউকে চোখে পড়ে না। এটা যেন অমাবস্যাতে পূর্ণিমার চাঁদ হাতে পাওয়ার মতোই!
এমন নিরিবিলি পরিবেশে দুটি সুন্দরী মেয়েকে পেয়ে ওদের তিনজনের মনে গিটারের টিউন বেজে উঠলো। কয়েক সেকেন্ডের কল্পনাতেই স্বপ্নের রাজ্যে হারিয়ে গেল। সেন্টমার্টিন দ্বীপের জেলে হিসেবে সারা জীবন শুধু দেশী বিদেশী সুন্দরী মেয়ে ট্যুরিস্টদের দেখেই গেল কিন্তু সম্ভোগ করার সুযোগ কখনো হলো না। সেজন্য ওদের জিব্বা টা একটু বেশিই লিক লিক করে উঠলো।
নৌকা পাড়ে ভিড়িয়েই দ্রুত দৌড়ে মেয়ে দুটির কাছে চলে যায়। ওদের দৌড়ের ক্ষিপ্রতা দেখে মনে হচ্ছিল, নির্জন অরণ্যের মধ্যে কোন হরিণীকে পেয়ে হায়নার দল অ্যাটাক করতে আসছে। তবে মেয়েদের কাছে পৌঁছানোর পর, ওরা শক খেয়ে আর্থিং হয়ে যায়। এই মুহূর্তে ওদের মুখের দিকে তাকালে, যে কেউই ভূত দেখার মতো ভয় পেয়ে যাবে। কেননা এই মুহূর্তে এমন ই চেহারা হয়ে গেল ওদের তিন জেলে মাঝির।
মেয়ে দুটি অসাড় অবস্থায় চিত হয়ে শুয়ে ছিল, যেরকম মৃত ব্যক্তিরা পড়ে থাকে। তবে এদের ক্ষেত্রে কিছুটা ভিন্নতার আঁচ পাওয়া গেল। কেননা মেয়ে দুটির গলাতে পাশাপাশি দু'টি ছিদ্র, যেন বড় আকারের সূচ ফুটানো হয়েছে। বলা যায় সাপে কামড়ের মতই চিহ্ন, শুধু এইটার মাত্রা একটু বড় ও গভীর!
..
..
..
..
মিস্টার শামস চৌধুরী, উনি একাধারে শিল্পপতি, রাজনীতিবিদ এবং সমাজ সেবক। ঢাকাতে কয়েকটা ব্যবসা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও রাজনৈতিক সংগঠন পরিচালনা করেন। বেশ সুনামের সহিত বিলাসবহুল জীবন অতিবাহিত করছেন। স্ত্রী বন্যা চৌধুরী ৪২ এবং দুই কন্যা সন্তান তানহা ১৯ ও তানজিলা ১৬ -কে নিয়ে সুখের সংসার।
স্ত্রী বন্যা চৌধুরী, স্বামীর ব্যবসায় সহযোগিতা সহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করেন। কেননা উনি নিজেও, ম্যানেজমেন্ট এর উপর পোস্ট গ্রাজুয়েশন করেছেন। দেখতে উনি যতটা সুন্দরী, তার থেকেও উনার ভাব গম্ভীর অনেক বেশি। অবশ্য আগে এমনটি ছিলেন না। খুবই চঞ্চল ও গানের পাখি হিসেবে উনার পরিচিতি ছিল স্কুল কলেজ লাইফে। এই গম্ভীর ভাবটা হয়তোবা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করার জন্যই, উনার মধ্যে জন্ম নিয়েছে।
অপরদিকে উনাদের মেয়েরা ঠিক মায়ের মতোই হয়েছেন, খুবই চঞ্চল ও মিশুক প্রকৃতির। যেটা বিয়ের আগের বন্যা চৌধুরী। সব সময় হই হুল্লোর, বন্ধুদের সাথে আড্ডা ও মাস্তিতে মেতে থাকে। বড় মেয়ের কন্ঠও একদম মায়ের কপি।
তানহা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্রী আর তানজিলা ইন্টার ফার্স্ট ইয়ার। এই শীতের মৌসুমে ক্লাসের একটু চাপ কম, তাছাড়াও এখন ঘুরাঘুরিরও মৌসুম। এমনকী সামনে পহেলা ফাল্গুন ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। এসব মিলিয়ে ওরা কক্সবাজার, সেন্ট মার্টিন দ্বীপ সহ অন্যান্য আকর্ষণীয় স্থানসমূহে ঘুরে বেড়ানোর প্লানিং করে। অবশ্য বাবা শামস চৌধুরী ব্যবসায়িক কাজের চাপ ও অন্যান্য শিডিউলে আটকে পড়াতে ওদের সঙ্গ দিতে পারে না।
অবশেষে মা মেয়েতে সফর করে আর সাথে নিজস্ব গাড়ি ও ড্রাইভার নিয়ে নেয়। কক্সবাজারের বিভিন্ন আকর্ষণীয় স্থান সমূহ সপ্তাহখানেক ঘুরেফিরে আনন্দ উল্লাস করে। তারপর টেকনাফ সেন্টমার্টিনের আকর্ষণীয় প্রবাল দ্বীপে চলে আসে। অবশ্য সেন্টমার্টিনে শুধু মা- মেয়েরাই আসে আর ড্রাইভারকে গাড়িসহ কক্সবাজার বিচের কাছে হোটেল স্যুটেই রেখে আসে।
অপরদিকে সেন্টমার্টিনে পৌঁছানোর পূর্বেই ওরা সমুদ্র উপকূলের কাছাকাছি বা সেন্টমার্টিন দ্বীপের ফেরি ঘাটের খুব কাছেই ব্লু মেরিন রিসোর্টের বুকিং দিয়ে রাখে। যেটা এখানকার মধ্যে সবচেয়ে ব্যায় বহুল ও লাক্সারি হোটেল। কেননা ব্লু মেরিন রিসোর্টের এসিযুক্ত ডাবল বেডরুমের ভাড়া ১৫,০০০ টাকা। ওরা দুটো রুম বুকিং নিয়েছিল, একটা মেয়েদের জন্য আরেকটা মা বন্যা চৌধুরীর।
13 ফেব্রুয়ারি সকাল এগারোটার দিকে ওরা ব্লু মেরিন রিসোর্ট এসে পৌঁছায়। হালকা ফ্রেশ ও নাস্তা করে বন্যা চৌধুরী ও দুই মেয়ে তানজিলা, তানহা ক্যামেরা নিয়ে বের হয়ে যায়। সারাদিন এখানে সেখানে ঘুরে বিকেলের দিকে স্যুটে ফেরত আসে। অতঃপর ফ্রেশ হয়ে লাঞ্চ করে ঘুমিয়ে পড়ে।
সন্ধ্যা ০৭ টার দিকে, ওরা দু'বোন তানহা- তানজিলা ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়। তারপর মায়ের রুমে নক করে কিন্তু ওদের আম্মু শারীরিকভাবে দুর্বল ও অসুস্থ থাকায় নিচে আর নামেন না। এজন্য ওরা দুই বোনই নিচে এসে হালকা কিছু ফাস্টফুড খেয়ে, পুনরায় হাঁটতে বের হয় সমুদ্র উপকূলে।
ওদের লক্ষ্য, রাতের খোলা আকাশে তারা দেখা ও কানে হেডফোন দিয়ে গান শুনতে শুনতে সমুদ্র উপকূলে পায়চারি করা। হয়তোবা এটাই ওদের শেষ ইচ্ছা ও লক্ষ্য ছিল, কেননা এরপর তো আর পৃথিবীর বুকে ওদের কোন ইচ্ছায় পূরণ হবার নয়।
..
..
..
..
একী দিন, 13 ফেব্রুয়ারি রাত দশটাঃ বন্যা চৌধুরী, উনার মেয়েদের অপেক্ষায় রুমে বসে আছেন। অনেক সময় ধরেই, উনি মেয়েদের নাম্বারে ফোন করছেন কিন্তু কোন রেসপন্স নাই। মানে ফোন বেজে চলছে কিন্তু ওরা পিক করছে না। এই অবস্থায় কিছুটা চিন্তার রেখা, উনার কপালে ভাঁজ পড়ে। এরকম টাতো হবার কথা নয়, কারণ তানহা তানজিলা বেশ রেস্পন্সিবল টাইপের মেয়ে। সেজন্য আরো বেশি চিন্তিত হয়ে পড়েন বন্যা চৌধুরী।
কোন উপায়ন্তর না দেখে হোটেল কর্তৃপক্ষকে জানান। হোটেল কর্তৃপক্ষ উনার মেয়েদের নাম্বার নিয়ে ডায়াল করে কিন্তু আশ্চর্যজনক সত্য ছিল যে, এবার তানহা- তানজিলা দুজনেরই ফোন সুইচড অফ ছিল। এখন যেন চিন্তার মাত্রাটা আরো বেশি বৃদ্ধি হয়ে যায়।
শেষে রাত 11 টার দিকে, হোটেল কর্তৃপক্ষ টেকনাফ থানা পুলিশকে ইনফর্মেশন দেয়।
তবে রাত বেশি হওয়া এবং প্রচন্ড শীত থাকায় পুলিশ হালকা একটা চক্কর দিয়ে সকালে খুঁজে দেখার প্লানিং করে। অপরদিকে সকালে খোঁজ নেওয়ার আগেই ওদের থানাতে ইনফরমেশন আসে- "দুটি অস্বাভাবিক লাশ পড়ে আছে সমুদ্র উপকূলে!"
..
..
..
..
আজ 14 ফেব্রুয়ারি দুপুর বারোটাঃ হাসপাতালের মর্গে অপেক্ষারত তানহা- তানজিলার বাবা-মা। লাশের ময়নাতদন্ত চলছে, যদিও আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে কোন ভয়ঙ্কর কিছুর আলামত। ইতিপূর্বে কখনো এরকম দুর্ঘটনা জনিত মৃত্যু চোখে পড়েনি কারো। অবশ্য এই মুহূর্তে সব থেকে বেশি বিপদের আঁচ করছে টেকনাফ মডেল থানা পুলিশ।
একেতো রাতের বেলাতে টহল দেয়নি, দ্বিতীয়তঃ এই কেসটা সুরাহা করতে ওদের জীবনের বারোটা বেজে যাবে। কেননা এমন একজন প্রভাবশালী ব্যক্তির মেয়েদের কেইস এটা, যার জন্য ওদের জবাবদিহিতার শেষ থাকবে না।
অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই, পুলিশের হাতে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এসে পৌঁছালো। রিপোর্ট দেখে দ্বিতীয় পর্যায়ের শক খেলো তাঁরা।
..
..
#চলবেই
#বিদ্রঃ আপনাদের ভালোলাগা ও ভালোবাসায় গল্পের সার্থকতা। আশা করি সকল ধরনের সাহায্য নিয়ে পাশে থাকবেন, #ধন্যবাদ।
Tag: othersdiscusionlife storyall poemsharelove storylife storywapkiz codetutorial tag codetutorial tag code
পোস্টটি কেমন লেগেছে তা জানাতে একদম ভুলবেন না !
মন্তব্য 0 টি আছে।
Need Login or Sing Up
কোন মন্তব্য নেই।